ভেজা দিনেই বেশি ডিম পাড়ে মশা

কারণ একই, কিন্তু ফল দু’রকম। একটি আবার অপরটির বিপরীত। নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে বাড়ির বাইরে জমে থাকা জমা পরিষ্কার জল। তার ফলে ভেসে যাচ্ছে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার ডিম পাড়ার জায়গা। উল্টো দিকে আবার আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়ে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার ডিম পাড়ার হার। আর এই সময়ে বাড়ির ভিতরে জমে থাকা পরিষ্কার জলকেই বেছে নেয় স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা। এক পতঙ্গবিদের ব্যাখ্যা, এডিস ইজিপ্টাই মশার ডিম পাড়ার পক্ষে ভেজা ভেজা আবহাওয়াই আদর্শ পরিবেশ। বাতাসের বেশি আর্দ্রতা স্ত্রী মশার শরীরের ভিতরে ডিমের দ্রুত পরিপূর্ণতা আনে। মশা একসঙ্গে বেশি ডিম পাড়ে। বিশেষ করে সূর্য যদি একেবারেই না ওঠে, তবে তা ডিম পাড়ার পক্ষে আরও আদর্শ পরিবেশ বলে জানিয়েছেন পতঙ্গবিদেরা। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, এক-একটি স্ত্রী এডিস মশা তিন দিন অন্তর মোট তিন বার ডিম পাড়ে। প্রতিবার ১০০টি করে ডিম পাড়ে। ভেজা আবহাওয়ায় দু’বার ডিম পাড়ার মধ্যে ব্যবধান যেমন কমে, তেমনই প্রতিবার তারা বেশি সংখ্যায়ও ডিম পাড়ে। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের সতর্কবার্তা, ‘‘বাড়ির ভিতরে নজর বাড়ান। কোথাও পরিষ্কার জল জমতে দেওয়া যাবে না।’’ গাছের টব, ফুলদানি, রেফ্রিজাটরের ট্রে— এগুলিই কিন্তু এডিস মশার ডিম পাড়া আদর্শ জায়গা, জানাচ্ছেন দেবাশিসবাবু। যে সব বাড়িতে এখনও চৌবাচ্চা রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন পুরসভার ওই পতঙ্গবিদ। রোজ জল পাল্টানোই শুধু নয়, কখনও বেশি দিনের জন্য বাড়ির বাইরে গেলে চৌবাচ্চার জল ফেলে তা পুরোপুরি শুকনো করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন দেবাশিসবাবু। কেন? পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, চৌবাচ্চার জল ফেলে দিলেও তার দেওয়াল ভেজা থাকলে ওই পরিবেশে তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এডিস মশার ডিম। তিন বছর পরে চৌবাচ্চায় জল ভরলে ডিম ফোটে। সেই ডিম থেকে যে নতুন মশা জন্মায়, তার মধ্যে মা মশার সব গুণ থাকে। ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশা কেবল মাত্র যখন কোনও ম্যালেরিয়া আক্রান্তকে কামড়ায়, তখনই তার শরীর থেকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু গ্রহণ করে। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, এডিস মশার চরিত্র অবশ্য আলাদা। কোনও একটি স্ত্রী এডিস মশার মধ্যে এক বার ডেঙ্গির জীবাণু ঢুকলে তা বংশানুক্রমে বাহিত হয়। অর্থাৎ, পরের প্রজন্মের স্ত্রী এডিস মশাকে আর ডেঙ্গি রোগীর শরীর থেকে জীবাণু গ্রহণ করতে হয় না। আগে ধারণা ছিল এডিস মশা শুধু বড়ির ভিতরে পরিষ্কার জমা জলে ডিম পাড়ে। অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাইয়ের মতো তারা বাড়ির বাইরে জমা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়তে পারে না। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় এডিস মশা চার দেওয়ালের বাইরে যেমন ডাবের খোলা, চাকা, ফেলে দেওয়া বোতলের মধ্যে জমা পরিষ্কার জলেও ডিম পাড়তে সক্ষম। মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ির ভিতরে নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় বংশধারা অক্ষুন্ন রাখতে চরিত্র পাল্টে এডিস মশা এখন অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাইয়ের মতো বাইরে জমে থাকা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। এক বার টানা বর্ষণের পরে কয়েক দিন বৃষ্টি না হলে বিভিন্ন জায়গায় যে জলটা জমে, সেখানেই মূলত অ্যানোফিলিস এবং এডিস মশা ডিম পাড়ে। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি হতেই থাকলে মশার ওই সব আঁতুড়ঘর ভেসে যায় বলে জানাচ্ছেন পতঙ্গবিদেরা। গত দু’দিন ধরে কলকাতায় যেমনটা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৮:২০
Share:

কারণ একই, কিন্তু ফল দু’রকম। একটি আবার অপরটির বিপরীত।

Advertisement

নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে বাড়ির বাইরে জমে থাকা জমা পরিষ্কার জল। তার ফলে ভেসে যাচ্ছে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার ডিম পাড়ার জায়গা।

উল্টো দিকে আবার আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়ে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার ডিম পাড়ার হার। আর এই সময়ে বাড়ির ভিতরে জমে থাকা পরিষ্কার জলকেই বেছে নেয় স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা।

Advertisement

এক পতঙ্গবিদের ব্যাখ্যা, এডিস ইজিপ্টাই মশার ডিম পাড়ার পক্ষে ভেজা ভেজা আবহাওয়াই আদর্শ পরিবেশ। বাতাসের বেশি আর্দ্রতা স্ত্রী মশার শরীরের ভিতরে ডিমের দ্রুত পরিপূর্ণতা আনে। মশা একসঙ্গে বেশি ডিম পাড়ে। বিশেষ করে সূর্য যদি একেবারেই না ওঠে, তবে তা ডিম পাড়ার পক্ষে আরও আদর্শ পরিবেশ বলে জানিয়েছেন পতঙ্গবিদেরা।

পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, এক-একটি স্ত্রী এডিস মশা তিন দিন অন্তর মোট তিন বার ডিম পাড়ে। প্রতিবার ১০০টি করে ডিম পাড়ে। ভেজা আবহাওয়ায় দু’বার ডিম পাড়ার মধ্যে ব্যবধান যেমন কমে, তেমনই প্রতিবার তারা বেশি সংখ্যায়ও ডিম পাড়ে।

কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের সতর্কবার্তা, ‘‘বাড়ির ভিতরে নজর বাড়ান। কোথাও পরিষ্কার জল জমতে দেওয়া যাবে না।’’ গাছের টব, ফুলদানি, রেফ্রিজাটরের ট্রে— এগুলিই কিন্তু এডিস মশার ডিম পাড়া আদর্শ জায়গা, জানাচ্ছেন দেবাশিসবাবু।

যে সব বাড়িতে এখনও চৌবাচ্চা রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন পুরসভার ওই পতঙ্গবিদ। রোজ জল পাল্টানোই শুধু নয়, কখনও বেশি দিনের জন্য বাড়ির বাইরে গেলে চৌবাচ্চার জল ফেলে তা পুরোপুরি শুকনো করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন দেবাশিসবাবু।

কেন? পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, চৌবাচ্চার জল ফেলে দিলেও তার দেওয়াল ভেজা থাকলে ওই পরিবেশে তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এডিস মশার ডিম। তিন বছর পরে চৌবাচ্চায় জল ভরলে ডিম ফোটে। সেই ডিম থেকে যে নতুন মশা জন্মায়, তার মধ্যে মা মশার সব গুণ থাকে।

ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশা কেবল মাত্র যখন কোনও ম্যালেরিয়া আক্রান্তকে কামড়ায়, তখনই তার শরীর থেকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু গ্রহণ করে। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, এডিস মশার চরিত্র অবশ্য আলাদা। কোনও একটি স্ত্রী এডিস মশার মধ্যে এক বার ডেঙ্গির জীবাণু ঢুকলে তা বংশানুক্রমে বাহিত হয়। অর্থাৎ, পরের প্রজন্মের স্ত্রী এডিস মশাকে আর ডেঙ্গি রোগীর শরীর থেকে জীবাণু গ্রহণ করতে হয় না।

আগে ধারণা ছিল এডিস মশা শুধু বড়ির ভিতরে পরিষ্কার জমা জলে ডিম পাড়ে। অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাইয়ের মতো তারা বাড়ির বাইরে জমা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়তে পারে না। পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় এডিস মশা চার দেওয়ালের বাইরে যেমন ডাবের খোলা, চাকা, ফেলে দেওয়া বোতলের মধ্যে জমা পরিষ্কার জলেও ডিম পাড়তে সক্ষম। মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ির ভিতরে নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় বংশধারা অক্ষুন্ন রাখতে চরিত্র পাল্টে এডিস মশা এখন অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাইয়ের মতো বাইরে জমে থাকা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।

এক বার টানা বর্ষণের পরে কয়েক দিন বৃষ্টি না হলে বিভিন্ন জায়গায় যে জলটা জমে, সেখানেই মূলত অ্যানোফিলিস এবং এডিস মশা ডিম পাড়ে। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি হতেই থাকলে মশার ওই সব আঁতুড়ঘর ভেসে যায় বলে জানাচ্ছেন পতঙ্গবিদেরা। গত দু’দিন ধরে কলকাতায় যেমনটা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন