Newborn

করোনাজয়ী মায়ের কোলে বাধা কাটিয়ে ফিরল সদ্যোজাত

শুক্রবার ছেলেকে কোলে নিয়ে রূপা মান্না বলছেন, ‘‘শুধু আমি নয়, আমার ছেলেও অনেক লড়াই করেছে।’’

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০৩:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

গর্ভবতী মহিলা করোনায় আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এর পরে সদ্যোজাতেরও শুরু হয়েছিল তীব্র শ্বাসকষ্ট। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে তাকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। যদিও শিশুটি করোনায় আক্রান্ত ছিল না বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মা ও সন্তানের এ হেন শারীরিক অবস্থায় টানা ছ’দিন জোড়া আতঙ্কে দিন কেটেছে হাওড়ার দাশনগরের মান্না পরিবারের। গত ২৫ অগস্ট সব শারীরিক বাধা কাটিয়ে সন্তান কোলে বাড়ি ফিরলেন সেই মা।

Advertisement

শুক্রবার ছেলেকে কোলে নিয়ে রূপা মান্না বলছেন, ‘‘শুধু আমি নয়, আমার ছেলেও অনেক লড়াই করেছে।’’ উৎকণ্ঠার সেই দিনগুলির কথা ভাবলে এখনও ভয় হয় প্রদ্যোত মান্নার। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে যাওয়ার উপায় ছিল না। ফোনেই স্ত্রী ও ছেলের খবর পাচ্ছিলাম। ভগবানের কাছে প্রার্থনা ও চিকিৎসকদের উপর ভরসা করেই দিন কাটিয়েছি।’’ গত ১০ অগস্ট দুই মেয়ের মা বছর চল্লিশের রূপাদেবীর করোনা ধরা পড়ে। ওই দিনই উপসর্গহীন ওই প্রসূতিকে সত্যবালা হাসপাতাল থেকে ফুলেশ্বরের বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে সরানো হয়।

সেখানে তাঁর ইউএসজি করে দেখা যায় প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ অগস্টের শেষে। কিন্তু ১৩ অগস্ট আচমকাই প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয় ওই মহিলার। যেহেতু আগের দুই সন্তানের জন্ম তাঁর স্বাভাবিক প্রসবেই হয়েছিল, তাই সেই পদ্ধতিতেই প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। ১৪ অগস্ট ভোরে রূপাদেবী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। নিঃশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সদ্যোজাতকে নিকুতে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুটি ‘বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া’য় আক্রান্ত ছিল। তার শরীরে ক্রমেই অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকায় নীল হতে শুরু করে শিশুটি। তখনই তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি কোভিড পরীক্ষাও করা হয়। যদিও সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আজও সে কথা ভাবলে আঁতকে ওঠেন রূপাদেবী। বললেন, ‘‘বাচ্চা ভেন্টিলেশনে শুনে মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম। তবে ডাক্তার ও নার্সরা সব সময়ে ভরসা দিতেন।’’

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১৬ অগস্ট বাচ্চাটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে, তাকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করে সি-প্যাপ দেওয়া হয়। ১৮ অগস্ট সেটি বন্ধ করে অক্সিজেন হুড পরানো হয়। পরের রাত থেকে শিশুটি স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা জানান, এর পরে সদ্যোজাতকে মায়ের দুধ খাওয়ানো অভ্যাস করানো হয়।

হাসপাতালের অধিকর্তা শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘বাচ্চাটিকে নিয়েই বেশি চিন্তা ছিল। তিন জন চিকিৎসক ওই মা ও শিশুর দায়িত্বে ছিলেন। প্রদ্যোতবাবুকেও ফোনে সব কিছু জানানো হত। তিনিও চিকিৎসকদের উপরে ভরসা রেখেছিলেন।’’

গত ১৯ অগস্ট ফের মা ও ছেলের কোভিড পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রেখে গত মঙ্গলবার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন রূপাদেবী। আর তার পরেই দুই দিদি ভাইয়ের নাম রেখেছে সার্থক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন