আট বছর পরে ঘরে ফিরলেন মা

মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলাটি নিজের সম্পর্কে তেমন ভাবে কিছুই বলতে পারতেন না। কাউন্সেলররা জানতে চাইলে শুধু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন ‘ধানকল মোড়’, ‘খড়দহ’ ও ‘আমার ভাই প্রভু সিনেমার পোস্টার সাঁটায়’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩০
Share:

মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলাটি নিজের সম্পর্কে তেমন ভাবে কিছুই বলতে পারতেন না। কাউন্সেলররা জানতে চাইলে শুধু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন ‘ধানকল মোড়’, ‘খড়দহ’ ও ‘আমার ভাই প্রভু সিনেমার পোস্টার সাঁটায়’।

Advertisement

আর এই কয়েকটি কথার উপরে ভিত্তি করেই সুদূর পটনা থেকে এক কাউন্সেলর ফোন করেছিলেন খড়দহ থানার বড়বাবুকে। কিন্তু এই তিনটি কথার উপর নির্ভর করে কী ভাবে এক জন মহিলার বাড়ির খোঁজ পাওয়া সম্ভব, তা বুঝে উঠতে পারেননি খড়দহ থানার আইসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে সিনেমার পোস্টার সাঁটানোর কর্মী প্রভুর সন্ধান মিলতেই পাওয়া গেল ওই মহিলার পরিজনদের। আট বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর গীতা সাউকে ফিরে পেলেন তাঁর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে খবর, দিন পনেরো আগে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর মোবাইলে পটনার একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে ফোন আসে। সেখানকার এক কাউন্সেলর জানান, বছরখানেক আগে বেগুসরাই স্টেশন থেকে এক মানসিক রোগগ্রস্ত মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরে ওই মহিলাকে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এক বছর চিকিৎসার পরে তিনি এখন বেশ সুস্থ। তবে নিজের সম্পর্কে ওই তিন-চারটি কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছেন না গীতাদেবী। এর পরেই ওই মহিলার পরিজনদের খোঁজ শুরু করে খড়দহ থানার পুলিশ।

Advertisement

প্রভু জানান, দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তাঁর দিদি গীতাদেবী। আট বছর আগে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। বহু খুঁজেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। গীতদেবীর পরিবারের সন্ধান মিলতেই মৃত্যুঞ্জয়বাবু বিষয়টি ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে জানান। তন্ময়বাবু খড়দহ থানার বড়বাবুকে পুরো বিষয়টি পুলিশি তরফে দেখার নির্দেশ দেন। সেই মতো সাব-ইনস্পেক্টর মনিরুল মোল্লা-সহ গীতাদেবীর পরিবারকে পাঠানো হয় পটনায়। গীতাদেবীকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা হয়।

বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুরের ডিসি (জোন-২) ধ্রুবজ্যোতি দে-র উপস্থিতিতে গীতাদেবীকে তাঁর ছেলে সঞ্জয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে মাঝের ছ’-সাতটি বছরের কোনও কথা মনে করতে না পারলেও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে গীতাদেবী বললেন, ‘‘কত বড় হয়ে গেছিস!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন