municipal workers

Death: পাইপের কাজ করতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু পুরকর্মীর

লক্ষ্মীকান্তবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রী রয়েছেন। ছোট ছেলে দেবাশিস মণ্ডল মোটর ভেহিক্‌ল অফিসার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাস্তায় দু’ফুট বাই দু’ফুট গর্ত খুঁড়ে, তাতে ঝুঁকে পড়ে জলের পাইপলাইন পরিষ্কারের কাজ করছিলেন কলকাতা পুরসভার এক কর্মী। তখনই পিছন থেকে তাঁকে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। এর জেরে গর্তের মধ্যে মাথা ঢুকে যায় বছর ঊনষাটের ওই ব্যক্তির। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাড়ির চাকাও সেই গর্তে পড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু ক্ষণ উদ্ধার করাই সম্ভব হয়নি তাঁকে। শেষে কোনওমতে গাড়ি সরিয়ে ওই প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বুধবার সকালে, লেক থানা এলাকার মহারাজা টেগোর রোডে এই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল (৫৯)। তিনি দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা। পুরসভার জুনিয়র মেকানিক হিসাবে তিনি কাজ করতেন। ঘটনার পরে স্থানীয়েরাই গাড়িটিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। লেক থানা গাড়িটিকে হেফাজতে নেওয়ার পাশাপাশি চালককেও গ্রেফতার করেছে। ময়না-তদন্তের পরে সন্ধ্যায় লক্ষ্মীকান্তের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, মহারাজা টেগোর রোডের একটি বাড়িতে বেশ কিছু দিন ধরেই পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে ওই বাড়ি থেকে পুরসভায় জানানো হয়েছিল। স্থানীয় বরো অফিস থেকে সেখানে পাইপের ফেরুল পরিষ্কার করতে পাঠানো হয়েছিল লক্ষ্মীকান্তবাবুকে। মঙ্গলবার ওই বাড়িটির সামনের রাস্তা খোঁড়া হয়। এ দিন সকালে সেখানে দলবল নিয়ে কাজে নেমেছিলেন লক্ষ্মীকান্তবাবু।

Advertisement

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ কলকাতার ওই রাস্তাটি অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। পাশাপাশি দু’টি গাড়ি চলাও প্রায় অসম্ভব। সেখানেই একটি বাঁকের মুখে খোঁড়া হয়েছিল গর্তটি। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে ফেরুল পরিষ্কারের কাজ করছিলেন ওই ব্যক্তি। আর রাস্তার বাঁক ঘুরতে গিয়ে গাড়িটির সামনে একটি মোটরবাইক চলে আসে। কোনওমতে তাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়িটি পিছন থেকে ধাক্কা মারে ওই ব্যক্তিকে। এর জেরে তিনি গর্তের মধ্যে পড়ে যান। গর্তে গাড়ির চাকাও পড়ে যায়।’’

আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, ‘‘ওই গাড়িচালক হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। বার বার বলা সত্ত্বেও তিনি গাড়ির চাকা গর্ত থেকে তুলতে পারছিলেন না। এর পরে পাড়ার কয়েক জন ঠেলে কোনওমতে গাড়িটিকে বার করে।’’ গর্ত থেকে তুলে প্রথমে লক্ষ্মীকান্তবাবুকে পাশের একটি বাড়ির গাড়ি-বারান্দায় শোয়ানো হয়। তার পরে দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

লক্ষ্মীকান্তবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রী রয়েছেন। ছোট ছেলে দেবাশিস মণ্ডল মোটর ভেহিক্‌ল অফিসার। তিনি জানান, তাঁর মা রেণুকাদেবী এবং দাদা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। দেবাশিস বলেন, ‘‘সামনের বছরের মার্চে বাবার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। একটা ছোট সরু রাস্তায় কী করে একটা গাড়ি এ ভাবে কাউকে মেরে ফেলতে পারে, বুঝতে পারছি না।’’

কিন্তু এই ঘটনায় পুরসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সঙ্কীর্ণ হলেও যে পথে গাড়ি চলাচল করে, সেখানে কেন জায়গাটি ঘিরে কাজ করা হচ্ছিল না, সেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের মাধ্যমে ওই ফেরুল পরিষ্কারের কাজ হয়নি। ‘টক টু মেয়র’-এ ফোন করে কাজ হয়েছে। পুরসভা তাই ভিতর থেকে লোক পাঠিয়েছিল। ফলে সেখানে কেন নিয়ম মানা হয়নি, তা তাঁরাই বলতে পারবেন।’’ এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর অন্তর্গত। সেখানকার বরো চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেত্রী জুঁই বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা। কিন্তু এখানে কোনও গাফিলতির ব্যাপার নেই। সব ওয়ার্ডে যে ভাবে কাজ হয়, এখানেও তা-ই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন