অবাধে: এ ভাবেই হচ্ছে সাফাই। যাদবপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দফতরের মেয়র পারিষদ না চাইলেও এখনও ম্যানহোলের ভিতরে ঢুকে নিকাশির সাফাই কাজ করে চলেছেন পুরসভার কর্মীরা। অথচ বারবার বলা হচ্ছে, ম্যানহোলের ভিতরে ঢুকে কাজ করা বিপজ্জনক। যে কোনও মুহূর্তে জীবন সংশয় হতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্মীর। তাই আধুনিক ডিসিল্টিং মেশিন কিনে সেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ তারক সিংহ তেমনই জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও শনিবার রাতে আনন্দবাজারের ক্যামেরায় ধরা পড়ল, দু’জন কর্মী ম্যানহোলের ভিতরে ঢুকে ময়লা বার করছেন। তা-ও আবার রাত এগারোটার পরে। এ ব্যাপারে নিকাশি দফতরের ডিজি অমিত রায় অবশ্য জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে বড় চ্যানেল রয়েছে, সেখানে লোক নামানো হয়।
কী দেখা গেল শনিবার রাতে?
যাদবপুর থানার সামনে গড়িয়াহাটমুখী রাস্তায় থাকা একাধিক ম্যানহোল খোলা। সাইনবোর্ডে লেখা ‘কলকাতা পুরসভার নিকাশির কাজ চলছে।’ দেখা গেল, পুরসভার দুই কর্মী সেই কাজের জন্য ম্যানহোলে ঢুকেছেন। একেবারে খালি গায়ে। ওঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘এই ম্যানহোল থেকে পরেরটার দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার। আমরা এই মুখটা পরিষ্কার করে নীচ দিয়ে পরের ম্যানহোল পর্যন্ত যাব।’’ এ ভাবেই কি কাজ করেন পুরকর্মীরা? ওঁরা জানালেন, শুধু তাঁরা নন, নিকাশি দফতরের এই জেলায় (কলকাতা ফোর) ৭০ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁরা সকলে এ ভাবেই ম্যানহোলে নেমে কাজ করেন নিয়মিত।
কর্তব্যরত অফিসার জানান, পুরসভার সদর দফতর থেকে নির্দেশ আসে কোথায় কাজ করতে হবে। সেই মতো এঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের জোনে টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোড, আনোয়ার শাহ রোড রয়েছে। যাদবপুর থেকে কাজটা শুরু হয়েছে ২৬ এপ্রিল। এক মাস চলবে।
কিন্তু নীচে নামলে বিপদ হতে পারে তো? পুরসভা সূত্রে জানা গেল, ওঁদের নামিয়ে জেনে নেওয়া হয় কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। ‘‘তবে কাজ তো নীচে গিয়েই করতে হবে। উপর থেকে তো আর এই কাজ হবে না,’’ বলেন ওই অফিসার।
এই বিপজ্জনক ব্যবস্থা কত দিন চলবে? অমিতবাবু জানান, এখনও ২০০-২৫০ জন কর্মীকে দিয়ে এই কাজ করানো হয়। মেশিন কিনতে উদ্যোগী হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। মেশিন কেনা হয়ে গেলেই ওই ব্যবস্থায় কাজ বন্ধ করার ভাবনা রয়েছে পুরসভার।
কিন্তু যত দিন তা না হয়, তত দিনে কোনও প্রাণহানি হয়ে গেলে কী হবে?
কর্মীদের কথায়, সব জেনেও নামতে হয়। কিছু তো আর করার নেই। পুরসভার অফিসারদের নির্দেশ তো মানতেই হবে। এটাই তো রুজি-রোজগার।