হাওড়ায় অবৈধ টোটো

জেলা প্রশাসনের ঘাড়েই দায় চাপাল পুরসভা

লাইসেন্স ফি নিয়ে টোটো চলার অনুমতি দিয়েছিল পুরসভাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, টোটোর উপরে তাদের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। সেই সুযোগে শহর জুড়ে হু হু করে বাড়ছিল অবৈধ টোটো। তখন পুর প্রশাসন সাফ জানিয়ে দেয়, সেগুলি রোখার দায় জেলা প্রশাসনের।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

লাইসেন্স ফি নিয়ে টোটো চলার অনুমতি দিয়েছিল পুরসভাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, টোটোর উপরে তাদের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। সেই সুযোগে শহর জুড়ে হু হু করে বাড়ছিল অবৈধ টোটো। তখন পুর প্রশাসন সাফ জানিয়ে দেয়, সেগুলি রোখার দায় জেলা প্রশাসনের।

Advertisement

এমনই ঘটেছে হাওড়া শহরে। হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শহরে বৈধ টোটো এবং ভ্যানোর সংখ্যা চিহ্নিত করে তাদের টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) দিতে পুরসভাকে জানানো হয় গত বছরের মে মাসে। প্রায় ১০ মাস পরে পুরসভা জানাল, ২৫-৩০ হাজার নয়, হাওড়া থেকে বালি পর্যন্ত বৈধ টোটো চলে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার। কারণ, টিন নেওয়ার জন্য ওই সংখ্যক আবেদনপত্রই জমা পড়েছে। টিন দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। পুরসভা আরও জানায়, এর বাইরে যত টোটো বা ভ্যানো শহরে চলে, তা বন্ধ করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

যদিও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পাল্টা অভিযোগ, টিন নেওয়ার জন্য যত আবেদনপত্র পুরসভায় জমা পড়েছে, বাস্তবে টোটো চলে তার ৬ গুণ। ওই সব অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ের পরে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত নভেম্বরের মধ্যে পুরসভাকে টিন দেওয়ার কাজ শেষ করতে বলা হয়। অভিযোগ, তারা উদ্যোগী হয়নি। ফলে অবৈধ টোটোর সংখ্যা লাগামের বাইরে চলে যায়। সম্প্রতি ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলে নড়ে বসেন পুর আধিকারিকেরা। শুরু হয় টোটোর ফর্ম বিলির কাজ। সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে পুরসভাই শহরে চলার জন্য এই পরিবেশবান্ধব যানকে অনুমতি দেয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রমশ টোটোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গতি কমে যায় শহরের।

এর পরেই প্রমাদ গোনে রাজ্য পরিবহণ দফতর। গত বছরের মাঝামাঝিতে তারা ঘোষণা করে, শহরে টোটো চলতে দেওয়া হবে না। টোটোকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করা হবে। হাওড়া শহরেও টোটো বেআইনি বলে ঘোষণা করে সেগুলিকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করতে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়।

রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, হিসেবে দেখা গিয়েছে, টোটো থেকে ই-রিকশা করতে ৮০ হাজার টাকা লাগবে। দু’টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৮০ শতাংশ ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করতে। শর্ত অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ টাকা দেবে ব্যাঙ্ক। বাকিটা দেবেন টোটো মালিক। ইতিমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, সরকারি শর্ত ছিল যে সব টোটো চালকের প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড এবং টোটো বিক্রির ভ্যাট দেওয়া রসিদ আছে, তাঁদেরকেই টিন দেওয়া হবে। একই শর্তে টিন দেওয়া হবে ভ্যানোকে। এ জন্য বিলি হয় ৬১৪৫টি ফর্ম। পুরসভা সূত্রে খবর, জমা পড়েছে ৫৪২৬টি আবেদন।

হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (লাইসেন্স) অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যত আবেদনপত্র পেয়েছি, তার বাইরে টোটো চললে সেগুলি ধরার দায়িত্ব আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর বা প্রশাসনের।’’ হাওড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভায় যত আবেদন জমা পড়েছে, সেই টোটো চলে শুধু মধ্য হাওড়ায়। হাওড়া ও বালি মেলালে তা ৬ গুণ হবে।’’

হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক অভিজিৎ লাটুয়া বলেন, ‘‘টোটো ও ভ্যানোর সংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই পুরসভাকে বলেছিলাম টিন দেওয়া শুরু করতে। এখন খোঁজ নিয়ে দেখা হবে কত অবৈধ টোটো শহরে চলে।’’ কিন্তু অবৈধ টোটো বন্ধ করতে কি প্রশাসনই উদ্যোগী হবে? অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘অবৈধ টোটোদের কিছু সময় দেওয়া হবে। তার পরে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন