হাওড়া ব্রিজে আর কর নয়, দাবি পুরসভার অন্দরে

একই গঙ্গায় দুই সেতু — দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও হাওড়া ব্রিজ। ব্যবধান বড়জোর ৩-৪ কিমির। দুই সেতু পেরোতে দুই নিয়ম। একটি পেরোতে কর দিতে হয়। অন্যটায় কর লাগে না।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

একই গঙ্গায় দুই সেতু — দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও হাওড়া ব্রিজ। ব্যবধান বড়জোর ৩-৪ কিমির। দুই সেতু পেরোতে দুই নিয়ম। একটি পেরোতে কর দিতে হয়। অন্যটায় কর লাগে না।

Advertisement

হাওড়া ব্রিজ পেরোতে টাকা দিতে না হলেও বছরের শেষে ওই ব্রিজের জন্য কর দিতে হয় কলকাতা ও হাওড়ার বাসিন্দাদের। নতুন ভাবে এলাকা ভিত্তিক কর লাগু হওয়ার আগে ওই করদাতাদের উপর থেকে সেই বোঝা তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যও মনে করেন, ‘‘অনন্তকাল ধরে এই দুই শহরের করদাতাদের থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থা শুরুর আগে পুরনোটি বন্ধ করার এটাই উপযুক্ত সময়।’’ তবে বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা পুরসভার নীতি নির্ধারণ করে থাকি, তাঁরা এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, হাওড়া ব্রিজ আইন ১৯২৬ মোতাবেক এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে দীর্ঘকাল। স্বাধীনতার আগে থেকে কর দিয়ে চলেছেন কলকাতা ও হাওড়ার বাসিন্দারা, যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। ওই দুই শহরের মেলবন্ধনের প্রধান সেতু হওয়ায় ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু হয়েছে কর দেওয়া।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার এক আমলা জানান, ব্রিটিশরা ওই নিয়ম করেছিল। করের টাকা আদায়ের একটা পদ্ধতিও বানানো হয়েছিল। সম্পত্তি করের সঙ্গেই তা যুক্ত করে দেওয়া হয়। সে নিয়ম চলছে আজও। এখন পুরসভার অন্দরমহল থেকেই প্রশ্ন উঠছে, আর কত কাল হাওড়া ও কলকাতার বাসিন্দাদের এই দায় বহন করতে হবে? পুর প্রশাসনের একাংশ অফিসারও চান, এখনই ওই ব্যবস্থার অবলুপ্তি দরকার। কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় ও বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়দের বক্তব্য, কর নেওয়ার পুরনো পদ্ধতি বদলাচ্ছে। তা হলে ব্রিটিশ আমলে চাপিয়ে দেওয়া সেই ব্যবস্থাই বা এখন মেনে চলতে হবে কেন? তবে বাম আমলেই বদলানো হয়নি কেন ওই ব্যবস্থা? ওঁদের জবাব, সম্পত্তি কর তোলার পুরনো পদ্ধতি এই আমলেই বদলাচ্ছে। তাই বর্তমান বোর্ডকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁদের যুক্তি, ওই ব্রিজ যে শুধুই কলকাতা বা হাওড়ার লোকেরা ব্যবহার করেন, এমন তো নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও দেশের অন্যত্র থেকে ৩০-৪০ লক্ষ লোক রেলে কিংবা গাড়িতে চড়ে দৈনিক এ শহরে ঢোকেন। করের ভার তাঁদের উপরে বর্তাবে না কেন? কর-মূল্যায়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাৎসরিক সম্পত্তি করের উপরে দশমিক ৫ শতাংশ হারে হাওড়া ব্রিজের কর নেওয়া হয়। সম্পত্তি করের বিলের সঙ্গে তা যুক্ত করা থাকে। তাই অনেকেরই অজানা থেকে যায় যে, আলাদা করে ওই কর দিতে হচ্ছে। প্রাক্তন মেয়র বিকাশবাবু বলেন, ‘‘ব্রিজ তৈরির পরে খরচ তোলার জন্য ওই টাকা তোলা হতো। এখন তো তেমন সমস্যা নেই। সরকার রক্ষণাবেক্ষণের টাকা দিতেই পারে। অন্য অনেক সেতুর ক্ষেত্রে যেমন করে থাকে। মানুষের উপরে বাড়তি বোঝা চাপানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না।’’

পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, ব্রিটিশ সরকারের করা আইনানুসারে প্রতি বছর আদায় হওয়া করের টাকা পোর্ট ট্রাস্ট কতৃর্পক্ষকে জমা দেওয়া হয়। ওই সংস্থাই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি দেখে। টাকার পরিমাণ কত জানতে চাইলে ওই আধিকারিক জানান, শুধু মাত্র কলকাতা পুরসভায় নথিভুক্ত সম্পত্তি করদাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ। কেউ ০.৫, কেউ ০.২৫ শতাংশ হারে কর দেন। এর সঙ্গে যুক্ত আছে হাওড়ার বাসিন্দাদের সম্পত্তি করও। সব মিলিয়ে বছরে এক কোটি টাকারও বেশি।

তবে সেই কর উঠিয়ে দেওয়া আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ নিয়ে মন্তব্যে নারাজ বন্দর কতৃর্পক্ষ। কোনও পদক্ষেপ করতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছে পুরকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন