সড়ক বাঁচাতে নামের ‘দাওয়াই’

শুক্রবার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ নির্দেশ দিয়েছেন, শহরের প্রতিটি রাস্তায় এ বার থেকে বসবে সাইন বোর্ড। তাতে লিখে দিতে হবে, কোনটি কোন ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বে রয়েছে। দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারও।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৯
Share:

দুর্দশা: ভাঙাচোরা পথে এ ভাবেই যাতায়াত। শুক্রবার, বাইপাস-কালিকাপুর মোড়ে। ছবি: সুমন বল্লভ

শহরের রাস্তা ঠিক রাখতে এ বার ‘কড়া দাওয়াই’-এর সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুর প্রশাসন।

Advertisement

শুক্রবার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ নির্দেশ দিয়েছেন, শহরের প্রতিটি রাস্তায় এ বার থেকে বসবে সাইন বোর্ড। তাতে লিখে দিতে হবে, কোনটি কোন ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বে রয়েছে। দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারও। কবে কাজ হয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে-সহ ঠিকাদারের নামধামও লেখা থাকবে সেই সাইন বোর্ডে। পুরসভা সূত্রের খবর, রাস্তার হাল খারাপ হলে কেউ যাতে আর দায়িত্ব এড়াতে না পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। রাস্তায় নাম লিখে এ ভাবেই সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদারকে বেঁধে রাখার কৌশল নিতে চায় পুর প্রশাসন। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ‘ধমক’ খেয়ে রাস্তার মান ঠিক রাখতে জরুরি কিছু পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছেন পুরকর্তারা। পুরসভা সূত্রের খবর, তার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ। খুব শীঘ্রই এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার নবান্নে এক বৈঠকে শহরের রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুর কমিশনারকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনি শহরের রাস্তায় ঘোরেন? কোন কোন রাস্তা খারাপ?’’ ই এম বাইপাস, ডায়মন্ড হারবার রোড, তারাতলা-সহ বেহালার একাধিক রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসল পুর প্রশাসন। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের রাস্তার দায়িত্বে রয়েছে পুরসভার সিভিল, মেক্যানিক্যাল এবং রাস্তা দফতর। শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন পুর কমিশনার। রাস্তার হাল কেন খারাপ? সময়ে সারানো হচ্ছে না কেন? রাস্তা সারাইয়ে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচের পরেও কেন এমন হচ্ছে, তার খোঁজখবর নেন তিনি। সিভিল দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, এর পরেই পুর কমিশনার নির্দেশ দেন শহরের রাস্তার দায়িত্বে কে বা কারা আছেন, অবিলম্বে তাঁদের নাম লিখে টাঙিয়ে দিতে হবে নির্দিষ্ট রাস্তায়। সেই রাস্তায় কোনও গর্ত হলে বা তা ভেঙে গেলে, স্থানীয় বাসিন্দারা সরাসরি ওই ইঞ্জিনিয়ারকে তা জানাতে পারবেন। নজর থাকবে পুরকর্তাদেরও। এর সঙ্গে দেখা হবে, ওই রাস্তায় শেষ কবে কাজ হয়েছে। সেই কাজের মেয়াদ কত দিন থাকার কথা ছিল এবং কত দিন চলল। এ সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নামও লিখতে হবে ওই সব সাইন বোর্ডে। অর্থাৎ, কোনও সমস্যা হলেই ডাক পড়বে ঠিকাদারের।

Advertisement

এখানেই শেষ নয়, যে সব জিনিস দিয়ে রাস্তা বানানো হয়, তার মান নিয়েও নানা অভিযোগ ওঠে। রাস্তা খারাপ হওয়ার পিছনে সেটাও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন পুরসভার পদস্থ কর্তারা। তাতে এক শ্রেণির ইঞ্জিনিয়ার থেকে রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজস নিয়েও অভিযোগ আসে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে এ বার সেই ‘চক্র’ ভাঙতে চান পুরকর্তারা। সূত্রের খবর, পুরসভার নিজস্ব দু’টি ‘হট মিক্সিং’ (যা রাস্তা তৈরির মূল উপাদান) প্লান্ট রয়েছে। একটি পামারবাজার এবং অন্যটি গরাগাছায়। বছরে প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন ‘হট মিক্স’ উ়ৎপাদিত হয়। পুর কমিশনারের নির্দেশ, সেই উপাদান তৈরিতে প্রয়োজন মতো মালমশলা দেওয়া হচ্ছে কি না, তাও নজরে রাখতে হবে। কোনও অভিযোগ মিললে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের জবাব দিতে হবে। পুর কমিশনার আরও জানিয়ে দিয়েছেন, শহরের রাস্তায় খানাখন্দ ধরা পড়লে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা সারিয়ে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে কোনও অজুহাত শোনা হবে না। আপাতত ত্রাহি রব পড়ে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে। শুরু হয়েছে শহরের রাস্তায় খন্দ খোঁজার কাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement