১০০ বছরের পুরনো এই টাা ট্যাঙ্ক।—ফাইল চিত্র
টাইটানিক জাহাজেও না কি এত ইস্পাত ছিল না! শতবর্ষেরও আগে বিলেত থেকে জাহাজ বোঝাই করে যা নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। গুণমানে একফোঁটা আপস না-করে এই ২০১৭-য় দেশজ ইস্পাতেই তার নতুন শরীর গড়া হচ্ছে।
১০৮ বছরের বৃদ্ধ কলকাতার টালা ট্যাঙ্কের ক্ষয় রুখতে ‘অ্যান্টি-এজিং’ চিকিৎসা শুরু হচ্ছে আর কিছু দিনেই। প্রকাণ্ড এক লোহার খাঁচার মাথায় ট্যাঙ্কের ত্বকে সূক্ষ্ম সব ফুটো ধরা পড়েছে পুর ইঞ্জিনিয়ারদের চোখে। নতুন ইস্পাতের পাত বসিয়ে ট্যাঙ্কের মেঝে, দেওয়ালের অংশ এ বার নতুন চেহারা পেতে চলেছে।
তবে পুরকর্তাদের আশ্বাস, এর ফলে জল পরিষেবা ব্যাহত হবে না একটুও। কারণ, ট্যাঙ্কের ভিতরে চারটি ঘরের খোপকাটা রয়েছে গোড়া থেকেই। এক-একটি খোপ ধরে সংস্কারের কাজ চললে, গোটা ট্যাঙ্কের কাজ বন্ধের প্রশ্ন নেই। ৮০ কোটি টাকা খরচে ২৮ মাস ধরে চলবে এই ‘স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার’-এর কাজ।
তবে এই চিকিৎসার ফলে খানিক ওজন বাড়বে টালার ট্যাঙ্কের। ট্যাঙ্কের সাবেক ইস্পাত অনেকটাই ফেলা যাবে না। তার উপরেই নতুন ইস্পাতের পাত বসানো হবে। জনৈক পুর আধিকারিকের কথায়, সে-যুগে বিলেত থেকে ৮৫০০ টন ইস্পাত আনা হয়েছিল। এখন কাজ সারা যাবে ৩৭০০ টন ইস্পাতেই। তবে বাড়তি ইস্পাতের বোঝা বহনের জন্য ট্যাঙ্কের লোহার খাঁচাও আরও মজবুত করা হবে।
কী ভাবে চলবে এই সংস্কার-পর্ব?
পুরসভা সূত্রের খবর, ট্যাঙ্কের সূক্ষ্ম ফুটো বন্ধ করতে ঝালাইয়ে লাভ হবে না। কারণ হাওড়া ব্রিজের মতোই নাটবল্টু নয়, রিভেটের (ধাতব পিন) সাহায্যে তৈরি এই ট্যাঙ্ক। ট্যাঙ্কের মেঝের স্টিলের পাতের উপরে অল্প ফাঁক রেখেই বসবে নতুন স্টিলের পাত। দু’টি পাতের মাঝের ৪০ মিলিমিটার অংশ ভরাট হবে ঢালাই করে। ট্যাঙ্কের ১৮ ফুট উঁচু দেওয়ালগুলিতে মেঝে থেকে এক মিটার পর্যন্ত নতুন স্টিলের পাত বসবে। এখানেও পুরনো ও নতুনের মাঝের ফাঁক ভরাট হবে ঢালাই করে। ট্যাঙ্কের চালাটিও বয়সের ভারে ক্ষতিগ্রস্ত। নতুন ইস্পাতে তা ফের গড়া হবে।
১৯১১ সালে পরিষেবা শুরু হয়েছিল কলকাতার অন্যতম মুখ এই জলাধারটির। এত বয়সেও বড়সড় অসুখ হয়নি তার। বজ্র-বিদ্যুৎ, ভূমিকম্পেও টলাতে পারেনি দৈত্যাকার লোহার শরীর। পুরকর্তাদের মতে, ট্যাঙ্কটির জন্মলগ্নে পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম বার্নাড ম্যাক্ক্যাব এবং তাঁর সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এ ই পিয়ার্সের বুদ্ধিতেই এই কামাল। প্রকাণ্ড লোহার খাঁচার মাথায়, ছোট-ছোট কাঠের স্লিপারে ট্যাঙ্কটি কিন্তু আলগা ভাবে বসানো। ট্যাঙ্কের নীচে খাঁচার ২৯৫টি লোহার পায়া জুড়ে থাকা বিমগুলির উপরেও আলগা ভাবে বিছোন, ছ’ইঞ্চি পুরু এক-একটি কাঠের স্লিপার। প্রকৃতির যে কোনও ঝড়ঝাপটা সইতে এই স্লিপারই ‘শক-প্রুফ’-এর কাজ করে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। সেই কাঠের স্লিপারও বদলানো হবে।
নগরোন্নয়নের একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের এই কাজে ৫৭ শতাংশ রাজ্য, ৩৩ শতাংশ কেন্দ্র ও ১০ শতাংশ দেবে কলকাতা পুরসভা। অফিস খুলে, প্রস্তুতি তুঙ্গে। দিন কয়েকেই শুরু হচ্ছে রাজসূয় যজ্ঞ।