বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পুর-উদ্যোগ

ঘরের সিএফএল বাল্ব কেটে গিয়েছিল দীপান্বিতা ঘোষের। আলোটি খুলে ফেলে দিয়েছিলেন ঘরের জঞ্জালের বাক্সে। সেখান থেকে পুরসভার ভ্যাটে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

ঘরের সিএফএল বাল্ব কেটে গিয়েছিল দীপান্বিতা ঘোষের। আলোটি খুলে ফেলে দিয়েছিলেন ঘরের জঞ্জালের বাক্সে। সেখান থেকে পুরসভার ভ্যাটে।

Advertisement

কলেজপড়ুয়া কুণাল ভৌমিক আবার নিজের খারাপ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন বিক্রি করেছিলেন ভাঙাচোরা জিনিসের কারবারির কাছে। রাস্তার ধারের গুমটিতে সেই ফোন ভেঙেচুরে ‘পার্টস’ বার করছিল জনা কয়েক কিশোর।

খালি চোখে দেখলে এ সব ঘটনা সাধারণ। কিন্তু পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাতিল মোবাইল, টিভি বা সিএফএল-এর মতো বর্জ্য সাধারণ জঞ্জালের থেকে অনেক বেশি বিপজ্জনক। মহানগরে এই বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে নাজেহাল কলকাতা পুরসভাও। পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার জানান, কী ভাবে এই সব বর্জ্য সামাল দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে পেশাদার উপদেষ্টা সংস্থাকে নিয়োগ করবেন।

Advertisement

গেরস্থ বাড়ির জঞ্জালের মতো নিত্যদিনই এমন বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরি হয়। কিন্তু সেই বর্জ্য থেকে কী কী বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘টক্সিক লিঙ্ক’-এর সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, কলকাতার ৮৪ শতাংশ মানুষের এ ব্যাপারে কোনও ধারণা নেই। ৬৫ শতাংশ মানুষ বৈদ্যুতিন বর্জ্যকে বাতিল জিনিসের কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেন। অথচ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের যন্ত্রপাতিতে সিসা, ক্যাডমিয়াম, পারদের মতো রাসায়নিক থাকে, যেগুলি মানবদেহে ঢুকলে যকৃত, কিডনি-সহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে নানা দুরারোগ্য ব্যাধি তৈরি করতে পারে। বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে সচেতনতা না থাকায় যে ভাবে এগুলি নষ্ট করা হয়, তাতে এই বিপদ আরও বাড়ছে বলেও দাবি করছেন তাঁরা।

পরিবেশবিদদের মতে, বৈদ্যুতিন বর্জ্যের মধ্যে তামা, অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতু থাকে। তা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য গরিব মানুষেরা কোনও সুরক্ষাকবচ ছা়ড়া ও অবৈজ্ঞানিক ভাবে সেগুলি ভাঙেন। ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক তাঁদের শরীরে যেমন মিশছে, তেমনই পরিবেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। তাঁদের মতে, এই বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নষ্ট করার পাশাপাশি এর ব্যবহার নিয়েও সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তা না হলে এই বিপদ ঠেকানো যাবে না।

পুরসভা সূত্রে খবর, বৈদ্যুতিন বর্জ্যের বিপদ সামাল দেওয়ার জন্য শহরে কী কী ধরনের বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরি হতে পারে, তার তালিকা তৈরি করতে হবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রতিটি বাড়ি থেকে এই বর্জ্যগুলি আলাদা ভাবে সংগ্রহ করতে হবে। কী ভাবে তা নষ্ট করা হবে, তার পদ্ধতি এবং জায়গাও ঠিক করতে হবে। এই পদ্ধতির ক্ষেত্রেই উপদেষ্টা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এই বর্জ্য নষ্ট না করে কোনও ভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় কি না, তা-ও উপদেষ্টা সংস্থার কাছে জানতে চাওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন