আজ বৈঠক

জাদুঘরে অনিয়ম নিয়ে সরব অছি পরিষদের সদস্যরাও

কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এত দিন ওই সব অভিযোগ তুলছিলেন পুরাতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদেরা। এ বার প্রশ্ন উঠল জাদুঘরের অন্দরেও। জাদুঘরের অছি পরিষদের একাধিক সদস্যই সরব হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে।

Advertisement

অলখ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৯
Share:

কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এত দিন ওই সব অভিযোগ তুলছিলেন পুরাতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদেরা। এ বার প্রশ্ন উঠল জাদুঘরের অন্দরেও।

Advertisement

জাদুঘরের অছি পরিষদের একাধিক সদস্যই সরব হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) রিপোর্টই বলে দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে কত গণ্ডগোল রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকও সংগ্রহশালার সংস্কারের সময়ে পুরাকীর্তির ক্ষতি হওয়ায় জাদুঘরের অফিসার ও কর্মী মিলিয়ে মোট সাত জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার জাদুঘরের অছি পরিষদের বৈঠকে পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা। প্রসঙ্গত, কলকাতার জাদুঘরের অছি পরিষদের মাথায় রয়েছেন রাজ্যপাল।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতীয় জাদুঘরের মতো একটি ২০০ বছরের পুরনো সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে উদাসীন বলেই বার বার নানা সমস্যা হয়। জাদুঘরের প্রাক্তন অধিকর্তা অনুপ মতিলাল বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দিকটি দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলিত।” পুরাতত্ত্ববিদদের বক্তব্য, অনেক সময়েই দেখা যায়, স্থায়ী অধিকর্তার পদ খালি পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। অথবা, যিনি দায়িত্ব পাচ্ছেন, তাঁকেও খুব বেশি দিন সময় দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তাই বার বার এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করার লক্ষ্যে কোনও ধারাবাহিক উদ্যোগ দেখা যায় না।

Advertisement

অছি পরিষদের একাধিক সদস্যেরও একই অভিযোগ। তাঁরা জানাচ্ছেন, একই কারণে ক্যাগের রিপোর্টে নানা অনিয়মের প্রসঙ্গ উঠলেও, সেগুলি সম্পর্কে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ উদাসীনই রয়ে গিয়েছেন। যেমন, ক্যাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংগ্রহশালায় মোট ক’টি পুরাকীর্তি রয়েছে তার হিসেবও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ঠিক মতো দিতে পারেননি। তিন বার তিন রকম হিসেব পাওয়া গিয়েছে। অছি পরিষদের এক সদস্য জানান, কর্তৃপক্ষ যে কতটা উদাসীন, তার সব থেকে বড় প্রমাণ এটাই। ২০০৮-এ ধরা পড়ে জাদুঘরের গান্ধার স্তূপটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পরে সেটি সংস্কার হয়। এর পরেও স্তূপটির সংরক্ষণ ঠিক ভাবে করা হচ্ছে না বলে পুরাতত্ত্ববিদেরা জানান। সংস্কারের সময়েই ভেঙে গিয়েছে রামপূর্বা থেকে প্রাপ্ত অশোকস্তম্ভের শীর্ষদেশের সিংহটি। সম্প্রতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুখোশ গ্যালারি।

তবে জাদুঘরের বর্তমান অধিকর্তা বি বেণুগোপাল দাবি করেন, “আমি আসার আগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ক্যাগ রিপোর্ট দিয়েছিল। তবে তার বেশির ভাগ সমস্যারই সমাধান করা গিয়েছে। আর সামান্য কয়েকটি বাকি রয়ে গিয়েছে।”

কিন্তু জাদুঘরের বহু গ্যালারিতেই সিসিটিভির ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ। সংগ্রহশালার কোথায় কী আছে, তা নিয়ে গাইড বই নেই। স্থাপত্য-উদ্যানটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাদুঘরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের কথা উঠলেও তা এখনও হয়নি। বহু পদ শূন্য। তার উপরে সংরক্ষণ আধিকারিক সুনীল উপাধ্যায় গত ক’মাস রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ।

জাদুঘরের মুখপাত্র সায়ন ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “দ্বিশতবর্ষ উদ্যাপনের আগে থেকেই সংগ্রহশালার সামগ্রিক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে সেই কাজ এখনও করা হচ্ছে। কিছু কাজ বাকি রয়েছে, যা আমরা দ্রুতই করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।” তিনি জানান, অনেক গ্যালারিতে ইতিমধ্যেই সংস্কারের কাজ হয়েছে। যেমন ভারহুত, গান্ধার, মুদ্রা, পুরাতত্ত্ব, মানব বিবর্তন, বস্ত্রশিল্প, আলঙ্কারিক শিল্প। এগুলিতে সিসিটিভি রয়েছে। আধুনিকীকরণের কাজ চলছে ব্রোঞ্জ এবং আর্ট গ্যালারিরও। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানান তিনি।

অছি পরিষদের সদস্য শচীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, জাদুঘরের বেশির ভাগ কাজই হচ্ছে হবে করে আটকে থাকে। কাজ ঠিক ভাবে শেষ করা হয় না। এই জন্যই পুরাকীর্তি সংরক্ষণ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে গাফিলতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাঁর কথায়, “জাদুঘরকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।” অছি পরিষদের আর এক সদস্যের বক্তব্য, “জাদুঘরের ক্ষতি হলে তার দায়িত্ব আমরা কেউই এড়াতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন