কাজ বন্ধ করে আন্দোলন বরদাস্ত নয়

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে সোমবার। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি এক রোগীর সঙ্গীদের আপত্তিকর উক্তির প্রতিবাদে ন্যাশনালেই ইন্টার্নদের কর্মবিরতির শরিক হন হাউসস্টাফেরা। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরেও তাঁরা প্রতিবাদের পথ থেকে সরে আসেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৬
Share:

বিক্ষোভ: হাসপাতালের অধ্যক্ষের ঘরের সামনে ক্ষুব্ধ জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। নিজস্ব চিত্র

ধাক্কাধাক্কি-মারামারি নয়, শুধু চিকিৎসার সময় রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে চিকিৎসকের কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় দুর্ব্যবহারকারীকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতারও করে। তার পরেও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাত থেকে ইন্টার্নরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ায় অত্যন্ত বিরক্ত স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা।

Advertisement

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে সোমবার। মেডিসিন বিভাগে ভর্তি এক রোগীর সঙ্গীদের আপত্তিকর উক্তির প্রতিবাদে ন্যাশনালেই ইন্টার্নদের কর্মবিরতির শরিক হন হাউসস্টাফেরা। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরেও তাঁরা প্রতিবাদের পথ থেকে সরে আসেননি। বিকেলের পরেও জট না-খোলায় ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ এবং হাসপাতাল কর্তাদের সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে তলব করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।

রাত পর্যন্ত তাঁদের আলোচনা চলেছে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট ভাষায় অসন্তুষ্ট স্বাস্থ্যকর্তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি বা মতপার্থক্য ডাক্তারদের পেশাগত সমস্যারই একটা দিক। এই ধরনের পরিস্থিতিকে বুদ্ধি এবং ধৈর্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করেই পরিষেবা দিতে হয়। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কথায়, ‘‘মারধর বা হামলা করা হলে অন্য ব্যাপার, কিন্তু যেখানে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তৎপরতায় অভিযুক্ত দ্রুত ধরা পড়ছে, সেখানে তার পরেও বিষয়টিকে বড় করে দেখিয়ে হাসপাতালে কাজ বন্ধ করাটা অপরাধ। তা কখনওই বরদাস্ত করা হবে না।’’

Advertisement

এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের মন্তব্য চাওয়া হলে তাঁদের নেতা অম্বরীশের উক্তি, ‘‘অনেক ধন্যবাদ। আপনারা সাংবাদিকরা অনেক উপকার করেছেন। আপনাদের সঙ্গে আর কোনও কথা নয়।’’

সরকারি ভাবে কর্মবিরতি ঘোষণা না-করলেও শনিবার রাত থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত ন্যাশনালে প্রায় ১৫০ ইন্টার্ন কাজে যোগ দেননি। শনিবার রাতে তাঁরা ইমার্জেন্সির কাজকর্মে বাধা দেওয়া এবং হাসপাতালের মূল ফটক ঘণ্টা তিনেক বন্ধ করে রাখার ‘সাহস’ দেখানোয় স্বাস্থ্যকর্তাদের অসন্তোষ দ্বিগুণ হয়েছে।

সোমবার হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না-হয় তার জন্য হাউসস্টাফ, পিজিটি, পোস্ট-ডক্টরাল ট্রেনি এবং সিনিয়র ডাক্তার— সকলকেই সতর্ক করে রাখা ছিল। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টা নাগাদ মেডিসিন ওয়ার্ডে দ্বিতীয় বর্ষের এক মহিলা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি এবং এক মহিলা হাউসস্টাফকে এক রোগীর বাড়ির লোক অসম্মানজনক উক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরই হাউসস্টাফদের অনেকে ইন্টার্নদের সঙ্গে কর্মবিরতি শুরু করেন। যদিও তাঁদের কর্মবিরতিও সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায় দফায়-দফায় ইন্টার্ন ও হাউসস্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু সমাধানসূত্র বার হয়নি।

ন্যাশনালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সামান্য ঘটনায় কর্মবিরতি হবে কেন? এর ফলে আমাদের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে কিছুটা সমস্যা তো নিশ্চয়ই হয়েছে। তবে সামলানো গিয়েছে।’’

যদিও হাসপাতালে এ দিন দেখা গিয়েছে একাধিক রোগীকে হাসপাতালে গোলমালের কথা বলে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বলা হয়েছে। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগণার রবীন্দ্রনগরের ১৯ বছরের হাসিনা খাতুন। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী হাসিনার নাক থেকে হঠাৎ রক্ত বার হচ্ছিল। তাঁকে এ দিন ন্যাশনালে নিয়ে আসেন বাবা শেখ মুখতার আলি। তাঁর কথায়, ‘‘ন্যাশনালে ডাক্তারবাবুরা বললেন, হাসপাতালে গোলমাল হচ্ছে। সেখানে দেখানো যাবেন না। তখন মেয়েকে নিয়ে নীলরতনে চলে যাই।’’

স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে সেমিনার করে জুনিয়ার ডাক্তারদের জটিল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করা, রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি শেখানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠনও এই সব কর্মশালা করছে। তার পরেও ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার এই প্রবণতা মারাত্মক এবং তা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন