চার মেট্রো ঘিরে আরও মসৃণ হবে পরিবহণ

শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেড বাদ দিয়ে যে সব জায়গায় এমন টার্মিনাল তৈরির ভাবনা শুরু হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নোয়াপাড়া, মাঝেরহাট, নিউ গড়িয়া এবং বিমানবন্দর। এ ছাড়াও অন্য কোনও কেন্দ্রে এমন জংশন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, বা ভবিষ্যতে কোনও স্টেশন যাত্রীদের ভিড়ের নিরিখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কি না, তা-ও সমীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে রাইটসকে।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share:

ছবি: সংগৃহীত

শুধু এসপ্ল্যানেড বা শিয়ালদহই নয়। কলকাতার সমস্ত মেট্রো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলে তৈরি হবে অনেকগুলি জংশন। ওই সব জংশনে যাতে সুসংহত পরিবহণ পরিষেবার ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে এ বার ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি এ নিয়ে রেলেরই সংস্থা ‘রাইটস’-কে সমীক্ষা করতে দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। ওই সব জায়গায় শিয়ালদহের মতোই ‘মাল্টি মোডাল টার্মিনাল’ গড়ে তুলতে চায় রাজ্য সরকার।

Advertisement

শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেড বাদ দিয়ে যে সব জায়গায় এমন টার্মিনাল তৈরির ভাবনা শুরু হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নোয়াপাড়া, মাঝেরহাট, নিউ গড়িয়া এবং বিমানবন্দর। এ ছাড়াও অন্য কোনও কেন্দ্রে এমন জংশন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, বা ভবিষ্যতে কোনও স্টেশন যাত্রীদের ভিড়ের নিরিখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কি না, তা-ও সমীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে রাইটসকে।

রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, শহরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর, নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর এবং জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পের মূল জটগুলি কেটে গিয়েছে। কাজ এগোচ্ছে দ্রুত গতিতে। সেই কাজের গতিপ্রকৃতি দেখতে গিয়েই তাঁদের মনে হয়েছে, বেশ কয়েকটি জংশন তৈরি হবে। এর মধ্যে এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহে বড় জংশন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এসপ্ল্যানেডে হবে ইস্ট-ওয়েস্ট, নর্থ-সাউথ (নোয়াপাড়া-কবি সুভাষ) এবং জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের একমাত্র জংশন। তার সঙ্গে সড়ক পরিবহণকে যুক্ত করে ওই টার্মিনাল তৈরি হবে। ঠিক হয়েছে, পুরো স্টেশন প্রকল্পই হবে ভূগর্ভে। মেট্রো স্টেশনের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ও বাসের পার্কিংও মাটির নীচে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।

Advertisement

একই ভাবে শিয়ালদহে উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির লোকাল ট্রেনের সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জংশন হবে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে বাস-অটো-ট্যাক্সিও। সেখানেও একই রকম টার্মিনাল তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।

ওই দু’টি টার্মিনালের সঙ্গেই উঠে আসছে বিমানবন্দর, নিউ গড়িয়া, নোয়াপাড়া এবং মাঝেরহাটের নাম। বিমানবন্দরে এসে মিশছে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্প। ওই মেট্রোয় যাতে যাত্রীরা সরাসরি বিমানবন্দর থেকেই উঠতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আবার উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো প্রকল্পে এখন এক দিকের প্রান্তিক স্টেশন নোয়াপাড়া। ওই মেট্রো যাবে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। সেখানেও একটি টার্মিনাল করা যায় কি না, তা সমীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে রাইটসকে।

জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো চালু হলে দক্ষিণ কলকাতার মাঝেরহাটে আর একটি বড় পরিবহণ কেন্দ্র গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। মাঝেরহাট স্টেশনের কাছেই শিয়ালদহ-বজবজ লোকাল ট্রেনের স্টেশন। সেটির কাছেই তারাতলা থেকে যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে মধ্য কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, বেহালা ও বজবজের। ওখান থেকে বন্দর এলাকাও কাছে হওয়ায় প্রচুর মালবাহী ট্রাক এবং ট্রেলার যাতায়াত করে ওই এলাকা দিয়ে। এ সবের
সমন্বয় ঘটিয়ে কী ভাবে একটি টার্মিনাল তৈরি করা যায়, সেটাই সমীক্ষা করে দেখবে রাইটস। যাতে যাত্রীরা মেট্রো থেকে নেমেই বাস-ট্যাক্সি-অটো পেতে সমস্যায় না পড়েন।

এমনকী একটি ট্রেন-স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাওয়ার জন্যও পৃথক রাস্তা করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। নিউ গড়িয়ায় এখন দক্ষিণ শহরতলির লোকাল ট্রেনের স্টেশন রয়েছে। সেটি আবার নোয়াপাড়া-কবি সুভাষ রুট অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো প্রকল্পেরও শেষ স্টেশন। তার সঙ্গে যুক্ত হবে বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের স্টেশন। ফলে ওখানে তিনটি ট্রেনের যাত্রীরা এসে নামবেন। তার পরে তাঁরা কী ভাবে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বেন, তা নিয়ে একটি সুসংহত পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে রাইটসকে।

রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সবগুলি মেট্রো প্রকল্প চালু হয়ে গেলে শহরের যাত্রাপথের মানচিত্রটাই পাল্টে যাবে। কাজেই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাল্টাতে হবে পরিবহণের মানচিত্রও। বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনকে কেন্দ্র করে যাত্রীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাবেন। সে কারণে, এ ব্যাপারে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। না হলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন