দীপ বারিক
ডানলপের পুলিশ আবাসনের পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত ইঞ্জিনিয়ারের মুখে রক্ত ও ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছিল। তবে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওই ক্ষত কোনও মারধরের নয়।
আর তা থেকেই তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভর্তি পুকুরে প্রায় ছ’দিন ধরে ডুবে থাকার ফলেই ওই যুবকের দেহে পচন ধরেছিল। আর তখনই জলের বিভিন্ন পোকার কামড়ে ওই ক্ষত তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তবে বর্ষবরণের রাতে পিকনিক করতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই যুবক কী ভাবে মারা গেলেন, সেই রহস্যের জট এখনও খোলা যায়নি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ আবাসনের বাসিন্দা এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে পিকনিক করতে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান দক্ষিণেশ্বর মে দিবস পল্লির দীপ বর্মণ। গত শনিবার পুলিশ আবাসনের ভিতরেই কচুরিপানা ভর্তি একটি জলাশয় থেকে তাঁর পচাগলা দেহ মেলে। সে দিন বিকেলেই তাঁর বাল্যবন্ধু সঞ্জয় বর্মণকে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ। তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করছে তারা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই যুবককে পুলিশ আবাসনে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হবে।’’
তদন্তকারীরা ধৃত সঞ্জয়কে জেরা করে জেনেছেন, বর্ষবরণের রাতে প্রায় ৩০ জন যুবক মিলে পিকনিক করেন তাঁরা। সকলেই সঞ্জয়ের পরিচিত। কিন্তু দীপের সঙ্গে সঞ্জয় ছাড়া আর কারও পরিচয় ছিল না। প্রশ্ন হল, কাউকে না চেনা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ছেলেবেলার বন্ধুর ডাকেই কি পিকনিক করতে গিয়েছিলেন দীপ? তদন্তে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যায় পিকনিকে যোগ দেওয়ার পরে সকলের সঙ্গে বসে নেশাও করেছিলেন ওই যুবক। তার পরে শুরু হয়েছিল নাচগান। কিন্তু রাত ১১টা নাগাদ দীপ জানান, তাঁর শরীর খারাপ লাগছে। সঞ্জয় জেরায় দাবি করেছেন, সেই সময়ে তিনিই সকলের থেকে দীপকে সরিয়ে এনে একটি ফাঁকা জায়গায় বসিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর হাঁটাচলা করার ক্ষমতাও ছিল না। শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় দীপকে বাড়ি পৌঁছনোর জন্য মোটরবাইক এনে সঞ্জয় দেখেন, তিনি সেখানে নেই। পুলিশ জানায়, সঞ্জয় আরও দাবি করেছেন, এর পরে পিকনিকে যোগ দেওয়া আরও কয়েক জন যুবককে নিয়ে আবাসনের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা দীপকে খোঁজেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, পিকনিকের জায়গা থেকে মেরেকেটে একশো মিটার দূরেই রয়েছে ওই জলাশয়। সেখানে ভারী কিছু প়ড়লেও তা কেউ টের পেলেন না কেন? তদন্তকারীরা দীপের অন্য বন্ধুদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।