Haridevpur

আজব নাটক! হরিদেবপুরের ‘১৪ শিশুর দেহ’ হঠাৎ বদলে গেল মেডিক্যাল বর্জ্যে

সেখানে চিকিৎসকরা কোনও মানব দেহ বা মানব দেহের টিস্যু বা দেহাংশ পাওয়া যায়নি। সবই নাকি ড্রাই আইস বা মেডিক্যাল বর্জ্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:৩৩
Share:

হরিদেবপুরের এই জমিতেই মিলেছিল প্যাকেট। নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকে ছিল সদ্যোজাত শিশুদের দেহ বা ভ্রুণ। সন্ধ্যা গড়াতেই সেই দেহই বদলে গেল ড্রাই আইসে বা মেডিক্যাল বর্জ্যে!

Advertisement

হরিদেবপুরে রবিবার সকাল থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল জমি সাফ করতে গিয়ে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় ১৪ টি সদ্যোজাত শিশু এবং মানব ভ্রুণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

শুরুটা হয়েছিল এদিন দুপুরবেলা। হরিদেবপুরের ২১৪ নম্বর রাজা রামমোহন রোডের পাঁচিল এবং টিন দিয়ে ঘেরা ৭২ কাঠা জমি পরিষ্কারের কাজ করছিলেন এক দল শ্রমিক। জমিটা এক সময় একটি দেবোত্তর সম্পত্তি হলেও কয়েক বছর আগে জমিটি নির্মাণের জন্য হস্তান্তর করা হয় বালাসারিয়া গোষ্ঠী নামে একটি বড় নির্মাণ সংস্থাকে।

Advertisement

জমি পরিষ্কারের সময় মূল রাস্তা থেকে যে গলিটি নীলাচলের দিকে গিয়েছে, সেই গলির পাশে টিনের ঘেরার মধ্যে আগাছা সাফ করতে গিয়ে শ্রমিকরা কয়েকটি কালো প্লাস্টিক পান। তার মধ্যে দেখা যায় ব্যান্ডেজ। শ্রমিকদের সন্দেহ হওয়ায়, তাঁরা খবর দেন কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের মাধ্যমেই খবর যায় স্থানীয় কাউন্সিলর সোমা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার এবং গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠি। প্রায় দেড় ঘন্টা তাঁরা সেখানে তদন্ত করেন। ছিলেন বিভাগীয় ডিসি নীলাঞ্জন বিশ্বাস।

সেখান থেকে বেরিয়ে শোভন বাবু বলেন, “ এখানে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের দেহ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ কমিশনার নিজে ছিলেন। আমি কাউন্সিলরের কাছ থেকে খবর পেয়ে এসেছি। পুলিশ তদন্ত করছে। ১৪ টি এ রকম দেহ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ পুরো জায়গায় তল্লাশি করছে।” মেয়র টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এই বয়ান দেওয়ার আগেই ততক্ষণে পুলিশের উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে গিয়েছে। সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে সেই ‘দেহ’ ভরা প্লাস্টিকের প্যাকেট নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশ বাহিনী।

আরও পড়ুন: কী ছিল সেই খবর দেখে নিন!

সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ পশ্চিম বিভাগের ডেপুটি কমিশনার হরিদেবপুর থানাতে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেও তিনি ক্যামেরার সামনে স্পষ্ট জানান, ভ্রুণ, সদ্যোজাতের দেহ বা মৃত শিশুর দেহ পাওয়া গিয়েছে। ১৪ টি আলাদা আলাদা প্যাকেটে। ব্যান্ডেজ মোড়া ছিল দেহগুলি। সব ক’টিই ছিল পচা গলা। তবে কঙ্কাল নয়।” তিনি বলেন, “আমরা দেহগুলি ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আশে পাশের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমে।” লালবাজারের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয় পাওয়া গিয়েছে মৃতদেহ।

লালবাজারের ইনসিডেন্ট রিপোর্ট

দেখুন ভিডিয়ো

এত কিছুর পর ঠিক ৭টা ১২ মিনিটে সেই ডেপুটি কমিশনার মেসেজ করে জানান, চিকিৎসকরা ওই প্যাকেট খুলে দেখেছেন। সেখানে চিকিৎসকরা কোনও মানব দেহ বা মানব দেহের টিস্যু বা দেহাংশ পাওয়া যায়নি। সবই নাকি ড্রাই আইস বা মেডিক্যাল বর্জ্য। তার আগে সেই একই কথা ফোন করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীঁণ ত্রিপাঠি।

আরও পড়ুন: ‘রাস্তায় অস্ত্র রেখে যান, পুলিশ নিয়ে যাবে’, আমডাঙাকে আহ্বান জ্যোতিপ্রিয়র

স্বভাবতই গোটা ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রশ্ন। তাহলে মেয়র থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বা পদস্থ কর্তারা কিসের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করার আগেই দেহ আছে বলে নিশ্চিত হলেন? রাতে নীলাঞ্জন বাবু হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও যাচ্ছেন। তাঁরাও পরীক্ষা করবেন। তবে দিনভর যা ছিল মানব শিশুর দেহ বা দেহাংশ, যা নিয়ে দিনভর তদন্ত করে নিশ্চিত ছিলেন পুলিশ কর্তারা — তা কী ভাবে মেডিক্যাল বর্জ্য হয়ে গেল তা নিয়ে রহস্য আরও ঘণীভুত হচ্ছে।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন