Medical College Kolkata

Nirmal Maji: তাঁর পাঠানো রোগীকে ভর্তিতে দেরি করায় চিকিৎসককে ‘অশালীন’ ভাষা, অভিযুক্ত নির্মল

নির্মলের দাবি, কলকাতা মেডিক্যালে চার-পাঁচ জন চিকিৎসক ১৪-১৫ বছর ধরে রয়েছেন। তাঁরা সপ্তাহে দু’দিন এক-দুই ঘণ্টা করে ডিউটি করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২২ ০৭:০২
Share:

হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির বিরুদ্ধে। ফাইল চিত্র।

তাঁর পাঠানো রোগীকে ভর্তি নিতে দেরি হচ্ছে। তাই জরুরি বিভাগে ঢুকে কর্তব্যরত প্রৌঢ় চিকিৎসককে ‘অশালীন’ ভাষায় হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির বিরুদ্ধে। সেই লিখিত অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠালেন ওই সিনিয়র অন ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার। অভিযোগ জানানোয় ফের হুমকির মুখে পড়তে পারেন বলেও চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

Advertisement

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার জেরে বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন নির্মল। চিকিৎসক মহলের একাংশের প্রশ্ন, বার বার এক জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে? নির্মলের অবশ্য দাবি, ‘‘৩০ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ যে মিথ্যা, তা প্রমাণিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানেন, আমি স্বচ্ছ। ক্ষমতার অপব্যবহার করি না।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র অন ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার কুণাল পান তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, নির্মল বিভিন্ন রোগীকে প্রায়ই জরুরি বিভাগে পাঠান এবং তৎক্ষণাৎ ভর্তির চাপ দেন। যাঁদের অনেকেরই ভর্তির প্রয়োজন থাকে না। সে ভাবেই বুধবার বিকেল ৩টে ১০ নাগাদ ৫৭ বছরের এক রোগীকে ভর্তির জন্য পাঠান নির্মল। তখন জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ৬৪ বছরের ওই চিকিৎসক। তাঁর দাবি, সাড়ে তিনটে নাগাদ সেখানে হাজির হন নির্মল ও হাসপাতালের এক ডেপুটি সুপার। কুণালবাবুর অভিযোগ, কেন রোগীকে ভর্তি করতে দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করেন নির্মল। ওই চিকিৎসকের অভিযোগ, নির্মল তাঁকে বিজেপির হার্মাদ বলে হুমকি দেন। রোগীর পরিজনদের সামনেই তাঁকে বিভিন্ন প্রাণীর নাম করে গালিগালাজ করেন। ক্ষমতাবলে নির্মল তাঁর রেজিস্ট্রেশন আটকে রাখবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ চিকিৎসকের। চিঠিতে তিনি আরও দাবি করেছেন, নির্মলের হুমকি এবং এমন দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয় অধিকাংশ চিকিৎসককেই।

Advertisement

নির্মলের দাবি, কলকাতা মেডিক্যালে চার-পাঁচ জন চিকিৎসক ১৪-১৫ বছর ধরে রয়েছেন। তাঁরা সপ্তাহে দু’দিন এক-দুই ঘণ্টা করে ডিউটি করেন। বুধবার দুপুরে জরুরি বিভাগে তিনি হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, সিনিয়র অন ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার দু’জনের বদলে আছেন এক জন। জুনিয়রেরা নিজেদের ঘরে বসে। তখন জরুরি বিভাগে ৩১ জন রোগী অপেক্ষায় ছিলেন। যাঁদের মধ্যে দু’জন ছ’ঘণ্টা ধরে অতি সঙ্কটজনক অবস্থায় অপেক্ষায়। নির্মল বলেন, ‘‘দুই সিনিয়র অন ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারকে শোকজ় করে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে ডেকেছি।’’

কুণালবাবুর বক্তব্য, ‘‘ছ’ঘণ্টা ধরে রোগীর অপেক্ষা করা-সহ যে অভিযোগ উনি করছেন, তা ঠিক নয়। সবই সিসি ক্যামেরায় ধরা রয়েছে। ফুটেজ দেখলেই সব জানা যাবে।’’ আর নির্মলের দাবি, ‘‘কাউকে অসংলগ্ন কথা বলি না।’’ পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভার স্পিকারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব, সিনিয়র অন ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পদটি তুলে দেওয়া হোক। দীর্ঘ বছর এঁদের ‘আসি যাই মাইনে পাই’ চলছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হবে।’’

সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘কোনও চিকিৎসকের গাফিলতি থাকলে নিয়মানুযায়ী রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু হেনস্থা বা গালিগালাজ করে চিকিৎসক সমাজকে অপমান করা হচ্ছে। জনগণকে খেপানো হচ্ছে।’’ ওই পদ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল অফিসারেরাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্তম্ভ। কিন্তু উনি নিজের মর্জিতে অনেক কিছুই করতে পারেন। তাই বিভিন্ন অভিযোগে ওঁর নাম জড়ালেও কিছুই হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন