মলে ব্লাড ব্যাঙ্ক নয়, চাপে পড়ে মত বদল মেয়রের

মলের মধ্যে ব্লাড ব্যাঙ্ক! সম্প্রতি এমনই একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল পুরসভা। শুরু হয়েছিল ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির প্রস্তুতিও। সেই মতো পয়লা ডিসেম্বর ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের নিয়ে ওই মল পরিদর্শনও করে ফেলেন পুরসভার প্রতিনিধিরা। ছিলেন স্বাস্থ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাজার দফতরের আধিকারিকেরাও।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৯
Share:

মলের মধ্যে ব্লাড ব্যাঙ্ক!

Advertisement

সম্প্রতি এমনই একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল পুরসভা। শুরু হয়েছিল ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির প্রস্তুতিও। সেই মতো পয়লা ডিসেম্বর ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের নিয়ে ওই মল পরিদর্শনও করে ফেলেন পুরসভার প্রতিনিধিরা। ছিলেন স্বাস্থ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাজার দফতরের আধিকারিকেরাও। ওই শপিং মলে পুরসভার লিজে নেওয়া জায়গায় ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্তও হয়ে গিেয়ছিল। রক্তের চাহিদা মেটাতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছিলেন খোদ মেয়র। কিন্তু তার পরেই এই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসে পুরসভা। ব্লাড ব্যাঙ্ক নির্মাণে ওই মল উপযুক্ত বলা হলেও দ্রুত সেই মত বদল করেন পুরকর্তারা।

পুরসভা সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার লেক মলের ছ’তলায় পুরসভার লিজে পাওয়া জায়গা রয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার বর্গফুট। সেখানেই আড়াই হাজার বর্গফুট এলাকা নিয়ে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা নেয় পুর-প্রশাসন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে শপিং মলে কি এ ভাবে পুরসভার জন্য জায়গা থাকতে পারে? এ বিষয়ে পুরসভার এক আমলা জানান, ১৯৮৭ সালে পিপিপি মডেলে লেক মার্কেট পুনর্গঠনে নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, নব-নির্মিত মলের একটি তলে পুরসভাকে জায়গা দিতে হবে। আর ওই বাজারে থাকা সমস্ত দোকানদারকে পুনর্বাসন দিতে হবে। সেই শর্ত অনুযায়ী পুরসভা লেক মলের ছ’তলায় যে পরিমাণ জায়গা পেয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট হাজার বর্গফুট। ইতিমধ্যেই সেখানে একটি ই-সেন্টার করেছে পুরসভা। বাকি জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। সেখানেই ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু শপিং মল কি ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য উপযুক্ত? আর প্রথমে এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হলেও পরে তা থেকে পিছিয়েই বা এল কেন পুরসভা? পুরসভার এক আমলা জানান, লেক মলে ব্লাড ব্যাঙ্ক করতে হলে নতুন করে কোনও কাঠামো গড়ারও দরকার নেই বলে জানানো হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, ৬ তলায় ওঠানামার জন্য আলাদা সিঁড়ি, লিফ্‌ট ও পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও মলের ভিতরে ব্লাড ব্যাঙ্ক করার সিদ্ধান্ত যথাযথ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে পুরসভার এই ভাবনার কথা জানাজানি হয়েছিল নবান্ন-এর উপর মহলে। সেখান থেকেই জায়গা পরিবর্তনের জন্য ‘চাপ’ আসে বলে পুর-প্রশাসন সূত্রে খবর। এর পরেই বদলে যায় লেক মলে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা। ততক্ষণে অবশ্য পুরসভার অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে লেক মলের জায়গা সমীক্ষা করে ফেলেছেন ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা। জায়গাটি যে ব্লাড ব্যাঙ্কের পক্ষে উপযুক্ত, তা-ও জানানো হয়। কিন্তু নবান্নের নির্দেশের পরে রাতারাতি উপযুক্ত জায়গাও হয়ে ওঠে অনুপযুক্ত। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো পরিকল্পনার সেই রিপোর্টে নোট দিয়ে জায়গা পরিবর্তনের কথা জানিয়ে দেন। কালীঘাটে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক করা হবে বলে জানানো হয়।

কিন্তু ইতিমধ্যেই পুর-মহলে প্রশ্ন উঠেছে, লেক মল বলেই কি এই স্থান বদলের সিদ্ধান্ত? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘লেক মলে এক সঙ্গে বেশি জায়গা না মেলাতেই স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে।’’ মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তের উপর সিলমোহর পড়ে।

কেন ওই স্থান বদল?

পুর-বাজার দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই তলে লেক মল-কতৃর্পক্ষ একাধিক মাল্টিপ্লেক্স গড়ছে। সেখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক হলে অসুবিধা হতে পারে বলেই হয়তো সিদ্ধান্ত বদল হল। যদিও ওই বক্তব্য ঠিক নয় বলেই জানান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জবাব, ‘‘ওখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক করার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে জায়গা দেখতে বিশেষজ্ঞদের পাঠানোও হয়েছিল। কিন্তু এক লপ্তে বেশি জায়গা নেই বলে স্থান বদল করা হয়েছে।’’

যদি তা-ই হয়, তবে বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুরসভার টিম ওই শপিং মলে গিয়ে নিজেদের লিজে নেওয়া জায়গায় ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন? তার কোনও সদুত্তর অবশ্য মেলেনি পুরকর্তাদের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন