সিসিটিভি নেই? লাইসেন্স মিলবে না হোটেল-রেস্তোরাঁর

মঙ্গলবার শেষ রাতে টি বোর্ডের সামনের ফুটপাথ থেকে বারো বছরের বালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সৌজন্যে, রাস্তার ধারে থাকা সিসিটিভি-র ফুটেজ। দুষ্কৃতীদের গাড়ির নম্বর ধরা পড়ে গিয়েছিল ওই ফুটেজ থেকেই।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

মঙ্গলবার শেষ রাতে টি বোর্ডের সামনের ফুটপাথ থেকে বারো বছরের বালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সৌজন্যে, রাস্তার ধারে থাকা সিসিটিভি-র ফুটেজ। দুষ্কৃতীদের গাড়ির নম্বর ধরা পড়ে গিয়েছিল ওই ফুটেজ থেকেই।

Advertisement

কিন্তু মাত্র দশ দিন আগে বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে এক যুবকের খুন হওয়ার কিনারা দু’সপ্তাহ পরেও হয়নি। এ জে সি বসু রোড র‌্যাম্পের নীচে একটি ড্রাম থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের দেহ। কিন্তু কারা তাঁকে খুন করল এবং কোন গাড়ি করে এসে আততায়ীরা দেহটি ফেলে দিয়ে চলে গেল, তা এখনও জানতে পারেননি পুলিশের তদন্তকারীরা।

এ ক্ষেত্রে পুলিশের কাজ কঠিন হয়েছে। কারণ, বিদ্যাসাগর সেতুর ওই র‌্যাম্পে কোনও সিসিটিভি ছিল না।

Advertisement

এমতাবস্থায় পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার শহরের সর্বত্র ক্লোজ্‌ড সার্কিট (সিসি) টিভির নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। লন্ডনই হোক বা মুম্বই, জঙ্গি হামলার তদন্তে কেল্লাফতে হয়েছে সিসিটিভি-র দৌলতেই। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ, কলকাতা পুলিশ এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁ, গেস্ট হাউসের ক্ষেত্রে পুলিশি লাইসেন্স পেতে হলে দোকানের বাইরে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক হোক।

পুলিশ সূত্রের দাবি, সিসিটিভি বসানো হলে তবেই ওই সব ব্যবসায় ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে সিসিটিভি বসাতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। পাশাপাশি, শহরের বহুতল এবং ছোট-বড় আবাসনগুলিতেও যাতে সিসিটিভি বসানো বাধ্যতামূলক করা যায়, সে জন্যও কলকাতা পুরসভার কাছে পুলিশের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, রেস্তোরাঁ, গেস্ট হাউস, হোটেলের ঢোকা ও বেরোনোর মুখে ছাড়াও ভিতরে সিসিটিভি লাগাতে হবে। এমন ভাবে ক্যামেরা বসাতে হবে, যাতে বাইরের ২৫ মিটার পর্যন্ত এলাকা তার নজরে থাকে। কমপক্ষে তিন মাস ক্যামেরার ছবি সংরক্ষণ করতে হবে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা শহরে এখন আছে প্রায় ৭০০ সিসি ক্যামেরা। আরও প্রায় ৫০০টি ক্যামেরা বসানোর জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তা খোলার কথা। এ ছাড়াও প্রতিটি থানাকে তাদের এলাকার কোথায় কোথায় সিসিটিভি-র নজরদারি নেই, তার তালিকা লালবাজারে জমা দিতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহ পর্যন্ত থানাগুলি থেকে অন্তত ১৬০টি জায়গায় ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় নতুন বসানো ক্যামেরাগুলি যাতে গাড়ির নম্বর পড়তে পারে, সে জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এত ক্যামেরার নজরদারির পরেও কেন বেসরকারি সংস্থাকে সিসিটিভি বসাতে বলা হচ্ছে? পুলিশকতার্দের মতে, নয়া নজরদারি ব্যবস্থায় মহিলাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে শহরের সার্বিক নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা যাবে বলে মনে করছেন পুলিশ কমিশনার। সেই সঙ্গে ছোটখাটো চুরি-ডাকাতিও ঠেকানো যাবে আশা পুলিশ কর্তাদের।

লালবাজার জানিয়েছে, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশের পরেই শহরের সরকারি-বেসরকারি সব সিসিটিভি-কে এক ছাতার তলায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অঙ্গ হিসেবে এক বেসরকারি সংস্থাকে একটি অ্যাপ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই অ্যাপে থাকছে কলকাতা পুলিশ এলাকার স্যাটেলাইট ম্যাপ। ওই ম্যাপের সূত্র ধরে কোন এলাকার কোথায় সিসিটিভি আছে, এক ক্লিকেই তা জানতে পারবেন তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি পুলিশের লাগানো ক্যামেরা ছাড়াও পেট্রোল পাম্প, অফিস, ব্যাঙ্ক-সহ বেসরকারি সিসিটিভি-র ফুটেজ হলে সেটি কোথায় আছে, কতটা এলাকা নজরে রাখছে, ক্যামেরার হার্ড ডিস্কই বা কোথায়— সে সবও জানা যাবে। দরকারে সরাসরি ওই ক্যামেরার ছবিও এক ক্লিকে দেখতে পাবেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসারও।

তবে কবে থেকে ওই অ্যাপ চালু হবে, তা নিয়ে লালবাজারের কর্তারা কিছু বলতে চাননি। শহরের কোথায় কোথায় এখন ক্যামেরার নজরদারি আছে, তার তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে লালবাজার। সেই সঙ্গে প্রতিটি থানার আধিকারিক তাঁর এলাকার ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা করছেন। লালবাজারে এক কর্তা জানান, মাত্র এক মাসের আলোচনাতেই মহাত্মা গাঁধী রোডের মতো এলাকার দু’পাশ সিসিটিভি-র নজরে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন