হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানোর বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া হতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছর জুলাই মাস থেকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার অভিযানও রাজ্যে শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই হেলমেটহীন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের বিরুদ্ধে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল পুলিশ। তবে পুলিশের একাংশই মানছে, ইদানীং হেলমেটবিহীন মোটরবাইক সওয়ারিদের ধরপাকড়ে কিছুটা ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে। বিনা হেলমেটে শহরে মোটরবাইক চালানোর প্রবণতাও আকছার চোখে পড়ছে। ফের সোমবারের দুর্ঘটনা থেকে সেটাই মালুম হল।
এ দিনের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুই যুবকের। আদতে বিহারের বাসিন্দা মৃত যুবকেরা সম্পর্কে দুই ভাই। এ ক্ষেত্রে দু’জন মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়েন। দু’জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এ জে সি বসু রোড এবং পরমা উড়ালপুলের সংযোগস্থলে। মৃত যুবকদের নাম, মহম্মদ তাহির আনসারি (২৫) ও মহম্মদ তৌকির আনসারি (২০)। কলকাতায় তপসিয়ায় থাকতেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আচমকা তাঁদের মোটরবাইকটি মাঝ উড়ালপুলে দাঁড়িয়ে পড়লে পিছন থেকে আসা অন্য একটি গাড়ি তাহির এবং তৌকিরকে ধাক্কা মারে। রাস্তায় ছিটকে পড়েন দুই ভাই। সিসি ক্যামেরায় ওই দুই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন লালবাজারের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের অফিসারেরা। লালবাজার থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওই তল্লাটে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। তাঁরাই দুই ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তাহিরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তৌকিরের।
বেলা ১২টায় বিনা হেলমেটে দুই ভাইয়ের মোটরবাইক নিয়ে বেরোনোয় খানিকটা হতবাক্ লালবাজারের ট্র্যাফিক কর্তারা। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘রাতে হলে তা-ও বুঝতাম। দুপুরে তো ট্র্যাফিকের গোটা বাহিনীই ডিউটিতে থাকে। তাতেও কী করে ওঁরা এতটা বেপরোয়া হওয়ার সাহস পেলেন, কে জানে! এটা ভাল লক্ষণ নয়।’’ বিনা হেলমেটে এই দুই আরোহী মোটরবাইক নিয়ে কিছুটা কেরামতি দেখাচ্ছিলেন বলেও প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি। শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ তল্লাটে কী ভাবে হেলমেটহীন অবস্থায় পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে তাঁরা গেলেন, পুলিশ তাঁদের কেন থামাল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সদুত্তর মেলেনি।
লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে উড়ালপুলের ওই দুর্ঘটনাস্থলের ঠিক নীচে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক স্কুটার আরোহীর। তার আগে ওই দিনই শহরের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে অন্য দু’টি দুঘটনায় আহত হয়েছিলেন ২৭ জন। পুলিশের দাবি ছিল, প্রতিটি দুর্ঘটনার পিছনেই প্রধান কারণ বেপরোয়া গতি। ওই তিন দুর্ঘটনার রেশ কাটার আগেই মঙ্গলবারের দুর্ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে থেকে এজেসি বোস রোড উড়ালপুলে উঠেছিলেন মোটরবাইক আরোহী দুই ভাই। তাঁদের গন্তব্য ছিল তপসিয়া। পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের কাছে হঠাৎ মাঝ উড়ালপুলে তাঁরা দাঁড়িয়ে প়ড়েন। তখনই একটি গাড়ি ধাক্কা মারে।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, দুই ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকলেও কোনও গাড়ি তাঁদের তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে লালবাজারের ট্র্যাফিকের অফিসাররা সিসিটিভিতে দেখতে পেয়ে স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডকে খবর দেয়। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত ঘাতক গাড়ির খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।