দুঃস্বপ্নের বছর ঘুরলেও কেউ কথা রাখেনি

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৫
Share:

অসহায়: এখনও পুরো সুস্থ হননি বিস্ফোরণে আহত সীতা। ফাইল চিত্র

কেউ কি কথা রাখেন না? বছর ঘুরে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মাথায়। তাঁরা নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত বিভাস (বিল্টু) ঘোষের বাবা-মা। এমনকি, ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।

Advertisement

ঠিক এক বছর আগে গাঁধী জয়ন্তীর সকালে কাজিপাড়া দিয়ে যাচ্ছিলেন পেশায় গৃহপরিচারিকা সীতা ঘোষ। সঙ্গে ছিল ছোট ছেলে, বছর আটেকের বিভাস। সেই সময়েই ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে আহত হয় সে। দুর্ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তার। আহত হন সীতাও। ৪৫ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বাড়িতে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন সীতা। শহরের অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে তাঁর ফের চিকিৎসা শুরু হয়। বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষাও হয় তাঁর। তবু পরিস্থিতি বদলায়নি বলে দাবি সীতা ও তাঁর স্বামী জন্মেজয়ের। হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে গেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে, তেমনই জানানো হয় হাসপাতালের তরফে। তাই বাইরে থেকে পরীক্ষাগুলি করাচ্ছেন সীতা। যা তাঁদের পক্ষে কষ্টসাধ্য বলে জানাচ্ছে ওই পরিবার। সীতার ঘাড়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তবে তাতে কতটা সুস্থ হবেন সীতা, তার আশ্বাস মেলেনি বলে দাবি তাঁর দেওর দীপেঞ্জয়ের। প্রয়োজনে শেষ সম্বল হিসেবে যে জমি রয়েছে, তা বিক্রি করে মুম্বইয়েও যেতে পারেন তাঁরা।

পরিবারের অনুযোগ, অনেক প্রতিশ্রুতিই এসেছিল। তা পূরণ তো দূর অস্ত! এখন কেউই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ দিকে, অসুস্থতার কারণে আর কাজে যাচ্ছেন না সীতা। পরিস্থিতির কথা জানাতে ‘দিদিকে বলো’তে ভরসা করেছিলেন সীতারা। প্রথম বার ‘দিদিকে বলো’র ফোনই কেউ ধরেননি বলে অভিযোগ অর্জুনপুর এলাকায় ভাড়ায় থাকা জন্মেজয়দের। পরে অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যে ‘দিদিকে বলো’তে তাঁদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন জন্মেজয়। এ নিয়ে আর ‌কিছু হয়নি বলে জানান তিনি।

Advertisement

বিস্ফোরণের বছরখানেক পরেও কোনও কিনারা না হওয়ায় মৃত বালকের বাবা মঙ্গলবার বললেন, ‘‘কেউ ধরাও পড়ল না। একটা কাজের ব্যাপারেও কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না।’’ তাঁর অভিযোগের আঙুল মূলত দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানের দিকে। চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘‘একটা দুর্ঘটনায় লাগাতার সাহায্য করা সম্ভব নয়। চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা পুরসভার নেই। ওঁরা আড়াই লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। হয়তো আরও দিতে পারলে ভাল হত। আমরা সাধ্যমতো করেছি।’’

নাগেরবাজার এলাকারই মিষ্টির দোকানে কাজ করেই স্ত্রী এবং একাদশ শ্রেণিতে পড়া ছেলে বিকাশকে নিয়ে এখন দিন কাটাচ্ছেন জন্মেজয়। পুরসভা ছাড়াও আরও কয়েক জন জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে চাকরির বিষয়ে কিছু আশ্বাস মিলেছিল তাঁদের।

প্রতিশ্রুতি পূরণ আর না পূরণের এই টানাপড়েনে দিন কাটছে সন্তানহারা পরিবারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন