বাড়ি ভাঙতে ‘ধীরে চলো’

বাড়িকে কীসের ভিত্তিতে ‘কনডেমড’ বলা হবে, আর কে-ই বা তার দায়িত্ব নেবে, আপাতত সেই জটিলতায় আটকে রয়েছে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

ঘা: ভাঙা হচ্ছে তালতলার সেই বাড়ির একাংশ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিল্ডিং আইনের নতুন ধারায় বলা হয়েছে, কোনও বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার আগে তা ‘কনডেমড’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। তার পরেই বাসিন্দাদের সুরক্ষার কথা ভেবে সেই বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেবে পুর প্রশাসন। কিন্তু, ওই ধরনের বাড়িকে কীসের ভিত্তিতে ‘কনডেমড’ বলা হবে, আর কে-ই বা তার দায়িত্ব নেবে, আপাতত সেই জটিলতায় আটকে রয়েছে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ। এ দিকে, গত দু’দিনে শহর জুড়ে গোটা পাঁচেক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে বাড়ি ভেঙে মারাও গিয়েছেন দু’জন। স্বভাবতই পুরসভার অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভার এই গড়িমসি আর কত দিন চলবে? শহরের বুকে মাথা তুলে থাকা বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন ধারার পরেও তাতে বাধা কোথায়? বিল্ডিং দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘কনডেমড অ্যাখ্যা দেওয়াতেই থেমে গিয়েছে নতুন আইন প্রয়োগের কাজ। কেউ আর নিজের কাঁধে বন্দুক রাখতে চাইছেন না।’’ আর সেই টালবাহানায় বিল্ডিং আইনে নতুন ধারা এলেও তা প্রয়োগে বিলম্ব হচ্ছে বলে ধারণা পুর অফিসারদের।

Advertisement

পুর আইন কী বলছে?

ওই ইঞ্জিনিয়ার জানান, পুরসভার বিল্ডিং আইন যখন তৈরি হয়, তখন বলা হয়েছিল, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড টাউন প্ল্যানার (সিএমএটিপি) বাড়ির হাল নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। সেই মোতাবেক ওই আর্কিটেক্টের উপরেই ‘কনডেমড বিল্ডিং’ ঘোষণার ভার পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সে সময়ে বাড়ির কাঠামোর হাল জানতে কোনও আধুনিক যন্ত্র ছিল না। কিন্তু বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা করে সহজেই বিপজ্জনক বাড়ির হাল বোঝা যায়। তাই চোখে দেখে কোনও বিল্ডিংকে ‘কনডেমড’ বলার পরে যদি আদালতে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তা হলে অসুবিধায় পড়তে পারে পুর প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট আর্কিটেক্ট। তাই ওই দায়িত্ব এক জনের কাঁধে রাখা নিয়ে সমস্যা বাড়ছে। পুরসভার বক্তব্য, সব দিক দেখেশুনে এগোতে গিয়েই বিলম্ব হচ্ছে নতুন ধারা প্রয়োগে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, বিপজ্জনক হিসেবে নোটিস দেওয়া হয়েছে, এমন বাড়ির সংখ্যা প্রায় ২৯০০। সব চেয়ে বেশি বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা চার এবং পাঁচ নম্বর বরোয়। তবে ওই তালিকায় শ’খানেক বাড়ির পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও সময়ে। তার তালিকাও বানিয়ে রেখেছে পুরসভা। কিন্তু ‘কনডেমড’ ঘোষণা না করলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

সমস্যা আরও আছে, জানালেন পুরসভার আইন দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকও। তাঁর কথায়, নতুন ধারায় বলা হয়েছে, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার জন্য আগে সুযোগ দেওয়া হবে বাড়ির মালিকপক্ষকে। তিনি রাজি না হলে পুরসভা টেন্ডারের মাধ্যমে কোনও সংস্থাকে বরাত দেবে।
প্রশ্ন উঠেছে, নিজের বাড়ি অন্যকে নির্মাণ করতে দেবেন তো মালিকপক্ষ? সেখানেও আবার মামলা হবে না তো? এ সব বিষয়গুলি নিয়েও চিন্তিত পুরকর্তারা। তাই সব দিক বুঝে এখন ধীরে চলার নীতি নিয়েছে পুর প্রশাসন।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনও বলেছেন, ‘‘পুরসভা চায়, মানুষকে নিরাপত্তা দিতে। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা দরকার। না-হলে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যাবে।’’ মেয়রের মতে, সেই কাজে অযথা বাধা না দিয়ে বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটেদের উচিত পুরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করা। শোভন বলেন, ‘‘রোম তো আর এক দিনে তৈরি হয়নি। সময় হয়তো লাগছে। তবে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার অভিযান হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন