গাছ বাঁচানোর জন্য পুরস্কার এখনও চালু হয়নি। হলে লালবাজার তার দাবিদার হতেই পারত। কারণ, কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ এমন ব্যবস্থা আনতে চলেছে, যাতে মাসে গোটা ষাটেক গাছ বেঁচে যাবে! এই ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই চালু হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
তার মানে কি কলকাতা পুলিশ গাছ বাঁচাতে পাহারা দেবে? ব্যাপারটা তা নয়। ট্রাফিক নিয়ম বা আইন যাঁরা লঙ্ঘন করছেন, পুলিশ তাঁদের জরিমানা করে একটি চালান দেয়। যা অবশ্যই কাগজের। এটাই বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এ বার তা বন্ধ করে ‘পেপারলেস চালান’ চালু করতে চলেছে পুলিশ। এই ব্যবস্থায় গাড়ির মালিক বা চালকের মোবাইলে এসএমএস করে চালান পাঠানো হবে। চালানে যা যা তথ্য থাকে, সবই থাকবে ওই বার্তায়।
এ জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের স্মার্ট ফোনে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমেই যান শাসনের নিয়ম না মানা ব্যক্তিদের মোবাইলে ই-চালান পৌঁছে যাবে। কোন ধারায়, কেন গাড়িটিকে জরিমানা করা হচ্ছে তার উল্লেখ থাকবে ই-চালানে। গাড়ির মালিক বা চালক সেটি নিজের মোবাইলে পড়ে রাস্তায় সার্জেন্টের কাছেও জরিমানা মিটিয়ে দিতে পারেন। টাকা দেওয়ার পর নিজের মোবাইলে বার্তা পাবেন গাড়ির মালিক বা চালক।
আর এখানেই চলে আসছে গাছ বাঁচানোর হিসেব।
রোজ গড়ে তিন-সাড়ে তিন হাজার মামলা রুজু করে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। সিগন্যাল লাল হওয়ার পরেও স্টপলাইন পেরোনোর মতো নিয়ম ভাঙা অবশ্য এই হিসেবে নেই। ট্রাফিক আইন ভাঙার অন্য ঘটনায় জরিমানা করা ও জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার জন্য দু’টি এ ফোর মাপের কাগজ লাগে। ফলে, রোজ প্রায় ছ’-সাত হাজার কাগজ লাগে শুধু চালান বাবদ। পরিবেশবিদদের মতে, একটি গাছ কেটে তিন হাজার এ ফোর কাগজ তৈরি হয়। ফলে, এই ব্যবস্থা চালু হলে দিনে প্রায় দু’টি গাছ বাঁচবে। মাসে তা গিয়ে দাঁড়াবে ৬০-এ।
এটিএম থেকে টাকা তোলার পরে এখন গ্রাহক যাতে রসিদের প্রিন্ট আউট না নেন, সেই ব্যাপারে উৎসাহিত করতে লেখা হয়— ‘সেভ পেপার, গো গ্রিন’। টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গে টাকার পরিমাণ, কোন এটিএম থেকে তোলা হয়েছে এবং তার পরে অ্যাকাউন্টে কত টাকা পড়ে থাকল— এই সব তথ্য দিয়ে এসএমএ আসে গ্রাহকের মোবাইলে। পুলিশের ই-চালান অনেকটা সেই রকম। তবে এর পরেও গাড়ির চালক কাগজের চালান কিংবা রসিদ চাইলে তাঁকে যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক গার্ডে।
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘শীঘ্রই ওই ব্যবস্থা চালু হবে। এতে কাগজের ব্যবহার কমায় গাছ বাঁচবে, পরিবেশ দূষণ কমবে।’’ সেই সঙ্গে ই-চালান ব্যবস্থায় ট্রাফিক সংক্রান্ত মামলা বা জরিমানা ব্যবস্থার গতি ও স্বচ্ছতা বাড়বে বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ জানাচ্ছে, অনেক সময়ে দেখা যায়, ট্রাফিক নিয়ম যিনি ভেঙেছেন, তাঁকে জরিমানা করে চালান কাটার পরেও কোনও কোনও মহলের চাপে শেষমেশ রেহাই দেওয়া হত। সে ক্ষেত্রে যে চালান কেটে ফেলা হয়েছে, পরে সেটি অন্য কারও বিরুদ্ধে জরিমানায় ব্যবহার করা হত, কেটে দেওয়া হত আগের বিবরণ। তবে ই-চালানে অফিসাররা তা করতে পারবেন না বলেই মনে করছে লালবাজার।
পুলিশকর্তাদের আশা, নতুন ব্যবস্থা কাজে গতিও আনবে। এখন কোনও গাড়িকে জরিমানা করার পরে সেই নথি ট্রাফিক গার্ডে জমা হয় দিনের শেষে। দু’তিন দিনের মাথায় ট্রাফিক গার্ডের এক কর্মী লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের কম্পিউটার শাখায় তা ‘আপডেট’ করেন। এর পর তা ডাক বিভাগের মাধ্যমে যায় আইনভঙ্গকারীর কাছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সাত -দশ দিন লাগে। পুলিশের দাবি, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবে আইন বা বিধিভঙ্গকারীর মোবাইলে।