নজরে নেই এইচআইটি সেতু, দশা শোচনীয়

সেতুর পিলারে কোথাও চওড়া ফাটল ধরেছে। কোথাও আবার সেতুর গা থেকে খসে পড়েছে চাঙড়। গায়ে গজিয়ে উঠেছে বট-অশ্বত্থ। বিভিন্ন জায়গায় সেতুর রেলিং ভেঙে গিয়েছে। সব থেকে ক্ষতি হয়েছে সেতুর নীচে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া অংশে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

বেহাল: ভেঙে গিয়েছে এইচআইটি সেতুর রেলিংয়ের একাংশ। হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সেতুর পিলারে কোথাও চওড়া ফাটল ধরেছে। কোথাও আবার সেতুর গা থেকে খসে পড়েছে চাঙড়। গায়ে গজিয়ে উঠেছে বট-অশ্বত্থ। বিভিন্ন জায়গায় সেতুর রেলিং ভেঙে গিয়েছে। সব থেকে ক্ষতি হয়েছে সেতুর নীচে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া অংশে। দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সংস্কারের কাজ না হওয়ায় সেই সব জায়গায় সেতুর কংক্রিটে ফাটল ধরে চাঙড় খসে পড়ছে।

Advertisement

মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের পরে হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর বেহাল দশা নিয়ে রাজ্য সরকার যখন সতর্ক, তখন এমনই বেহাল দশা মাত্র কয়েক মিটার দূরের আর একটি সেতুর। যার পোশাকি নাম জিটি রোড বাইপাস সেতু। হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআইটি-র তৈরি বলে এলাকায় এটি এইচআইটি সেতু বলেও পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সেতু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে

বঙ্কিম সেতু পরিদর্শন করলেও নজরের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে প্রায় ৫২ বছরের পুরনো এই সেতুটি। অভিযোগ, উত্তর হাওড়ার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী, ৮০০ মিটার লম্বা এই সেতুর নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা তো দূর, দীর্ঘ দিন ধরে এর ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে সেতুর গায়ে গজিয়ে ওঠা বড় বড় গাছ না কাটায় অনেক জায়গায় সেই গাছ সমেত রেলিং ভেঙে নীচে পড়ে গিয়েছে। এমনকি, সেতুর পিলারে বিপজ্জনক ভাবে ফাটল ধরলেও তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়নি।

Advertisement

বঙ্গিম সেতুর অদূরে এইচআইটি সেতুর একটি অংশ গিয়েছে রেললাইনের ওপর দিয়ে। নিয়মমতো ওই অংশটি রেল রক্ষণাবেক্ষণ করে। কিন্তু সেতুর বাকি অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এইচআইটি-র। সেতুর এই অংশের নীচের দিকটা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে অফিস ও গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই দীর্ঘ দিন ধরে তালাবন্ধ। দু’একটি অফিস ও গুদাম ঘরে গিয়ে দেখা গিয়েছে যে, সেখানে সেতুর নীচের অংশের দশা সমান শোচনীয়।

কিন্তু এত দিন ধরে এই সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণ কী?

কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, ‘‘সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ না করার মূলে রয়েছে দায়িত্ব নিয়ে টানাপড়েন। এইচআইটি সেতুটি তৈরি করার পরে চেয়েছিল যে, বঙ্কিম সেতুর মতো এর দায়িত্বও কেএমডিএ-র ঘাড়ে ফেলতে। এই নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টালবাহানা চলেছে। তাই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে তার প্রভাব পড়েছে।’’

সেতুর দায় নিয়ে যে টানাপড়েনের কথা স্বীকার করে এইচআইটি-র চেয়ারম্যান সুলতান সিংহ বলছেন, ‘‘সেতুটি এইচআইটি তৈরি করলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল কেএমডিএ-র। কিন্তু ২০০০ সালে একবার মেরামত করার পর কেএমডিএ আর সেতুতে হাত দেয়নি। ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে সেতুটির। এ বারও বঙ্কিম সেতু নিয়ে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ওই সেতুটি মেরামতের দায়িত্ব কেএমডিএ নিতে চায়নি। তাই আমাদেরই করতে হচ্ছে।’’

এইচআইটি সূত্রে খবর, মাঝেরহাট বিপর্যয়ের পর কেএমডিএ সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি প্রস্তাবিত খরচ তৈরি করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে দিয়ে ওই সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে এইচআইটি সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন