নিয়মে চলছে কি ‘বিশেষ’ স্কুল, খবর রাখে কে

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নিয়ম আছে বলেই দাবি। তা মেনেই কাজ হয় বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের মুখপাত্রেরা।

Advertisement

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৯
Share:

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নিয়ম আছে বলেই দাবি। তা মেনেই কাজ হয় বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের মুখপাত্রেরা। কিন্তু সেই নিয়ম কি যথেষ্ট? তার উত্তর মেলা ভার। যেটুকু নিয়ম আছেও বা, তা-ও বুঝি শুধু খাতায়-কলমে! সরকারি অনুমোদন পাওয়া পর্যন্তই তা মানার মেয়াদ। তার পরে তা মানা হল কি না, দেখবে কে? অভিভাবক নিজে গিয়ে অভিযোগ না জানালে কিংবা কোনও স্কুল খবরের শিরোনামে উঠে না এলে জানার উপায়ও নেই অভিযুক্ত স্কুলটির নাম সরকারি খাতায় আদৌ আছে কি না।

Advertisement

সদ্য আলিপুরে সেনা অফিসারদের স্ত্রীদের সংগঠন দ্বারা পরিচালিত একটি স্কুলে সাড়ে চার বছরের সম্বুদ্ধ ঘোষের মৃত্যুর পরে যেন আরও আতঙ্কিত অভিভাবকেরা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকদের একটি সংগঠনের পক্ষে সৌমেন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেনাদের স্কুলে তো শুনেছি কত ভাল ব্যবস্থা। সাঁতার থেকে ঘোড়ায় চড়া, কত কিছুই তো শেখানো হয়। এ দিকে, সাধারণ নজরদারিও নেই? আমাদের ছেলেমেয়েরা তা হলে যাবে কোথায়!’’ অন্যান্য স্কুলেই বা কী ব্যবস্থা আছে তাঁদের সন্তানদের দেখভালের, তা নিয়েও নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তা। আদৌ কি নিয়মমতে চলার বন্দোবস্ত রয়েছে? নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা যদিও বলেন, ‘‘রাইট্স অব পার্সনস উইথ ডিজেবিলিটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী সরকারি নিয়ম বলবৎ করেই কাজ হচ্ছে। কোনও স্কুল শিক্ষা দফতরের অনুমোদন পেলে, ওই দফতরের খোঁজ রাখতেই হবে।’’

এ দিকে, গত বছরও বারাসতের একটি বিশেষ স্কুলে অনুষ্ঠান চলাকালীন পাশের পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিশুর। ডিজেবিলিটি কমিশন খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে, স্কুলটির সরকারি অনুমোদনই নেই। অথচ দিব্যি ক্লাস চলছিল। দুর্ঘটনাটি নজরে আসতে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি। কিন্তু এ ভাবে আরও কত স্কুল চলছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিজেবিলিটি কমিশনার দেবব্রত চট্টরাজ বলেন, ‘‘জেলায় সরকারি কর্মীরা মাঝেমধ্যে নজরদারি চালান। কিন্তু কলকাতায় পাঁচ জন কর্মী নিয়ে কত দিকে যাব? অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হয়।’’ তিনি জানান, কোনও স্কুলকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার আগে পরিকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং বিশেষ শিক্ষক আছেন কি না— সব দেখা হয়। পাঁচ বছর অন্তর ফের সবটা দেখে অনুমোদন পুনর্নবীকরণ হয়। আর নজরদারি? দেবব্রতবাবু জানান, স্কুল পরিদর্শনের সময়ে সিসি টিভি বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

Advertisement

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুলে কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন? শুধু সিসি টিভি-র পরামর্শ দিয়ে কি দায় সারা যায়? তারাতলার একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুভ্রা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এক মুহূর্ত কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াকে একা ছাড়ি না। এক জনের জন্য থেরাপিস্ট, আয়া, স্বেচ্ছাসেবক-সহ অন্তত দু’-তিন জন করে থাকেন। সেই সঙ্গে থাকেন বাড়ির লোক।’’ এর পরেও অভিযোগ পেলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় বলে জানান তিনি।

কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বাবা-মায়েরা অনেক সময়েই অভিযোগ জানাতে ভয় পান। ফলে ছেলেমেয়ে স্কুলে যত্নের অভাব ঘটলেও কিছু করার থাকে না বলে জানাচ্ছেন অভিভাবকদের অনেকেই। দক্ষিণ কলকাতার স্বাগতা রায় যেমন বলেন, ‘‘ছেলে খুবই চঞ্চল। স্কুলে দেওয়ার সময়ে তা জানিয়েছিলাম। কিছু দিন পরে দেখি, ওর শরীরে মারধরের দাগ। তখন থেকেই অন্য স্কুলের খোঁজ শুরু করি।’’ বাঁশদ্রোণীর মধুছন্দা দে তা পারেননি। অভিযোগ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুলে তাঁর ছেলেকে চেয়ারে বেঁধে ‘শিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে জেনেও কিছু করতে পারেননি। স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরা ব্যবস্থা নেননি। বিকল্প ব্যবস্থা না করতে পেরে ওই স্কুলেই পাঠাতে বাধ্য হন এই মা। সমাজকর্মী জিজা ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারের উচিত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুলগুলিতে ঘন ঘন নজরদারি চালানো দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন