Coronavirus in Kolkata

দূর থেকে এসেও পরিষেবা মিলল না শম্ভুনাথ পণ্ডিতে

করোনা নয়, অন্য রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা মিলবে কোথায়? বিভ্রান্ত রোগীরাসম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, কোভিড পরিস্থিতিতে অন্য রোগে আক্রান্তেরা চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০১:৫৩
Share:

হয়রানি: লক্ষ্মণ দাসকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অসুস্থ বালকের চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসে একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়েছেন পরিজনেরা। কিন্তু অভিযোগ, করোনা-আবহে দিন তিনেক ধরে ঘুরেও এ শহরের কোনও হাসপাতালেই চিকিৎসা পায়নি বছর দশেকের লক্ষ্মণ দাস। শেষে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের দরজা থেকেই ছেলেটিকে নিয়ে জলপাইগুড়ি ফিরে গেলেন তার পরিজনেরা।

Advertisement

সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, কোভিড পরিস্থিতিতে অন্য রোগে আক্রান্তেরা চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব চিত্র দেখতে গত মঙ্গলবার দুপুরে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে দেখা গেল, প্রবেশপথের সামনে ফিভার অ্যান্ড কফ ক্লিনিকের বন্ধ দরজার সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে লক্ষ্মণ। বাবা ভোলা দাস, মামা মিঠু রায় এবং ঠাকুরমা মিনা দাস অসহায় ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। ওই ক্লিনিক আবার খুলবে বুধবার সকালে। তাই ওই বালক কবে চিকিৎসা পাবে, সেই প্রশ্নই করছিলেন তার পরিজনেরা।

জলপাইগুড়ির সেনপাড়া সুকান্তনগর কলোনির বাসিন্দা ভোলাবাবু জানাচ্ছেন, দিন পনেরো আগে খেলতে গিয়ে লক্ষ্মণের কোমরের কাছে পেটের বাঁ দিকে বাঁশের একটি ধারালো অংশ ঢুকে যায়। তাকে জলপাইগুড়ির একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অস্ত্রোপচার করে বাঁশের টুকরো বার করা হয়। ভোলাবাবুর কথায়, “তার পরে ছেলেটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরে দু’পায়ে ব্যথা শুরু হয়। এতটাই ব্যথা যে, হাঁটতে পর্যন্ত পারছে না। দু’পা অসাড় হয়ে গিয়েছে। ওখানকার চিকিৎসকেরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেন। তার পরেই ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসি।”

Advertisement

আরও পড়ুন: কারও প্রত্যাশা পূরণ, কারও বা তার একটু বেশি

এর আগেও কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছেন ভোলাবাবু। কিন্তু এ বার দিন তিনেক আগে কলকাতায় এসে দেখেন, অবস্থা পুরো বদলে গিয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে শোনেন, সেখানে মূলত কোভিডের চিকিৎসা চলছে বলে অন্য রোগীদের চিকিৎসা বা ভর্তি হচ্ছে না। ছেলের চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সেটাই প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি তাঁরা। লক্ষ্মণের মামা মিঠুবাবুর দাবি, অনেক ভোগান্তির পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমআরআই হয়। কিন্তু সেখানে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে না দেখে তাঁরা এসএসকেএমে যান।

আরও পড়ুন: বালিকার দেহে মিলল যৌন হেনস্থার চিহ্নও

অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যায় এসএসকেএমে নিয়ে গেলেও লক্ষ্মণের চিকিৎসা হয়নি। রাতে প্রতীক্ষালয়ে কাটে। এ দিকে যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়ছিল। ভোলাবাবু বলেন, “যন্ত্রণা বাড়লে মাঝেমধ্যেই জ্বর আসে ওর। ওর জ্বর দেখে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের ফিভার অ্যান্ড কফ ক্লিনিকে গিয়ে ছেলের কোভিড উপসর্গ আছে কি না, তা দেখিয়ে আসতে বলেন। তার পরেই চিকিৎসা হবে বলে জানানো হয়।”

কিন্তু মঙ্গলবার যতক্ষণে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পৌঁছন লক্ষ্মণের পরিজনেরা, ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই ক্লিনিকের দরজা। অসহায় ভোলাবাবুর প্রশ্ন, “ক্লিনিক দুপুর ২টোয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বার ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাব? অথচ এখানে না দেখালে চিকিৎসা হবে না বলে জানিয়েছে এসএসকেএম। সারা রাত কি তা হলে রাস্তাতেই থাকব?”

শেষে ছেলেকে নিয়ে জলপাইগুড়ি ফিরতে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেন পরিজনেরা। ভোলাবাবু বললেন, “কলকাতায় এসেছিলাম ছেলেকে দেখাতে। কিন্তু চিকিৎসা হল না। তাই ফিরে যাচ্ছি। সামান্য কাজ করি। নার্সিংহোমে রেখে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই।”

কেন এ ভাবে অসহায় রোগীদের পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “সরকার বিনামূল্যে সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ১০০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা কি কেউ করতে পারে? দিল্লি, আমেরিকা কোথাও কি সরকারি উদ্যোগে ১০০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে? কিন্তু কেউ ফিরে যাক সেটাও কাম্য নয়। আমরা সব রোগীকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জলপাইগুড়ির ওই বাচ্চাটি কেন ফিরে যাচ্ছে, তা বিস্তারিত ভাবে আমাদের জানাক। নিশ্চয়ই ওর চিকিৎসা হবে।” আর এসএসকেএমের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘জ্বর থাকলে এসএসকেএমের আউটডোর রোগীদের ফিভার অ্যান্ড কফ ক্লিনিকে দেখিয়ে আসতে বলা হয়। তবে সেটি বন্ধ থাকলে ফের এখানে এসে ইমার্জেন্সিতে দেখানোর সুযোগ ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন