চার সেকেন্ড নয়, ট্যাংরার রহস্য ৫৭ সেকেন্ডের

যদিও ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একটি কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে গোবিন্দ খটিক রোডের এক রাতের দৃশ্য তোলা হয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

এই দুই দৃশ্যতেই যত রহস্য।

হিসেবে গরমিল?

Advertisement

ট্যাংরার ঘটনায় বৃহস্পতিবার লালবাজারের প্রকাশ করা ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এবং তা ঘিরে পুলিশকর্তাদের মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সংগৃহীত ওই ফুটেজ দেখিয়ে পুলিশের ইঙ্গিত, ওই রাতে যা কিছু ঘটেছে, তা চার সেকেন্ডের মধ্যেই হয়ে থাকতে পারে। যদিও পুলিশকর্তাদের মন্তব্য, ‘‘মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যে কোনও মহিলাকে হাত ধরে টেনে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার চেষ্টা বা তাঁকে বাঁচাতে যাওয়া শ্বশুরকে পিষে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে যদি কারও মনে হয়, তিনি তা ভাবতেই পারেন। আমরা কিছু বলব না।’’

যদিও ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একটি কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে গোবিন্দ খটিক রোডের এক রাতের দৃশ্য তোলা হয়েছে। কম্পিউটারটি ওই এলাকার একটি দোকানে লাগানো সিসি ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত। ফুটেজটি শুরু হয়েছে রাত ১১টা ৫২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে। গোবিন্দ খটিক রোড ধরে ওই সময়ে বেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। ঠিক ১১টা ৫৩ মিনিট নাগাদ স্ক্রিনের ডান দিক থেকে প্রবেশ করেন তিন জন। দুই মহিলা এবং এক শিশুকন্যা। পুলিশের দাবি, ওই দুই মহিলার এক জনই অভিযোগকারিণী।

Advertisement

সঙ্গে থাকা শিশুকন্যাটি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে। কয়েক পা পিছনেই হাঁটতে দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনিই মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় মৃত প্রৌঢ় বলে পুলিশের দাবি। তাঁরও পিছনে আরও কয়েক জন।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্ক্রিনের বাঁ দিক দিয়ে মহিলা এবং বাকিরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ঠিক সেই দিক দিয়েই ঢোকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। নীল বাতি জ্বলা অ্যাম্বুল্যান্সটি ঠিক ১১টা ৫৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে স্ক্রিনের ডান দিক দিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। স্ক্রিনে সেটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র তিন থেকে চার সেকেন্ড। অর্থাৎ, সিসি ক্যামেরায় যে দৃশ্য ধরা পড়েনি, তা প্রায় ৫৭ সেকেন্ডের।

এখানেই প্রশ্ন, তা হলে লালবাজারের কর্তারা মাত্র চার সেকেন্ডেই সব কিছু হয়েছিল বলে মনে করছেন কেন?

ঘটনার তদন্তে এখানেই তাঁদের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে এ দিন দাবি করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে যে সময়ের ব্যবধান তাঁরা পেয়েছেন, সেটি কখনওই চার সেকেন্ডের নয় বলে তাঁদের দাবি। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সহজেই বোঝা যাচ্ছে, যে অংশের ছবি ক্যামেরা সূত্রে এখনও পাওয়া যায়নি, অর্থাৎ যে জায়গাটি ঘটনাস্থল হিসেবে ধরা হচ্ছে, সেখানে অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্তদের স্থায়িত্ব ছিল ৫৪ থেকে ৫৭ সেকেন্ডের। এ বার ওই সময়ের মধ্যে সেখানে কী ঘটেছিল, সেটি অন্য প্রশ্ন।’’ কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রের খবর, গোবিন্দ খটিক রোডের ঘটনাস্থল হিসেবে তারা প্রায় ৬৩ মিটার জায়গা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় অতটা রাস্তার ছবি ধরা সম্ভব হয়নি। ফলে যতটা রাস্তার ছবি পাওয়া গিয়েছে, তার দূরত্ব মেপে ওই রাস্তা পার করে যেতে অ্যাম্বুল্যান্সটির কত সময় লাগল, সেই অঙ্ক কষে অ্যাম্বুল্যান্সের গতি মাপার চেষ্টা হচ্ছে।

তা হলে সেই সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই চার সেকেন্ডের কথা বলা হল কেন? তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘তদন্ত এখনও চলছে। এখনই মন্তব্য করার সময় আসেনি। তথ্যের ক্ষেত্রে কোনও গরমিল থাকলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন