থিম থেকে ব্যবস্থাপনা, পুজোর দায়িত্বে মেয়েরাও

এত দিন থিম তৈরি থেকে পুজোর রাশ হাতে রাখতেন পুরুষেরাই। কিন্তু পুজোর ময়দান বলছে, উৎসব কাপের এই রীতিটাও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। শহরের পুজোয় ক্রমশ উঠে আসছেন মহিলারা।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
Share:

হলই বা নারীর উপাসনা!

Advertisement

এত দিন থিম তৈরি থেকে পুজোর রাশ হাতে রাখতেন পুরুষেরাই। কিন্তু পুজোর ময়দান বলছে, উৎসব কাপের এই রীতিটাও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। শহরের পুজোয় ক্রমশ উঠে আসছেন মহিলারা। সহকারী বা নেপথ্যচারিণী হিসেবে নয়, থিম মেকার ও ‘পুজোকর্তা’ হিসেবে!

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখতে গিয়ে আলাপ। সেই আলাপ থেকেই গাঁটছড়া বাঁধেন শুভদীপ ও সুমি। স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুমিই এখন শহরের নবীন থিম মেকার। ৬৬ পল্লিতে এ বার তাঁর থিম বহুরূপী। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সেই থিমেরই জয়জয়কার। ওয়েলিংটনের ব্যবসায়ী সমিতির পুজোয় তুলে ধরেছেন জরির কাজ।

Advertisement

উঠতি থিম মেকার সুদীপ্তা দাস হিন্দুস্থান পার্ক পূর্বাচল দুর্গোৎসব কমিটিতে এ বার তুলে ধরেছেন ‘সৃষ্টি’। সৃষ্টি অর্থাৎ প্রকৃতি ও পুরুষ। আর প্রকৃতির অর্থ নারী। নারীরই অপর রূপ প্রকৃতি। ফুলের মধ্যে সে আত্মপ্রকাশ করে। তা থেকে ফল অর্থাৎ এক নতুন জীবনের সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনই সে নারী রূপে তার অন্তরে এক নতুন জীবনের আত্মপ্রকাশ ঘটায়, এক শিশুরূপে। তবে অদ্ভুতভাবে এই ছোট্ট শিশুও তার মায়ের সঙ্গে নাড়ীর টানে আবদ্ধ থাকে। ফাল্গুনী সঙ্ঘে তিনি তুলে ধরেছেন দুর্গার নয়টি রূপ। মণ্ডপ দেবীর মুকুটের মতো।

উঠতি শিল্পী তানিয়া ভট্টাচার্য রয় স্ট্রিটের পুজোয় মণ্ডপ সাজিয়েছেন লোকগানের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে।. প্রয়াত শিল্পী কালিকাপ্রসাদের স্মৃতির উদ্দেশে এই থিম।

শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁ এ বার রূপচাঁদ মুখার্জি লেনে তুলে ধরছেন পটচিত্র সেখানে রয়েছেন আর এক মহিলা শিল্পী স্বর্ণ চিত্রকরও।

শুধু থিম মেকার নয়, অনেক জায়গায় পুজোর রাশও নারীদের হাতে। ৫২ বছরের পুরনো পুজো উত্তর কলকাতার কালী দত্ত স্ট্রিট সর্বজনীন। বছর ষোলো আগে পুরুষদের বদলে মহিলাদের হাতে আসে ক্ষমতা। ওই পুজোর বর্তমান সভাপতি মিলি দত্তের কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতায় এটিই প্রথম মহিলা পরিচালিত পুজো।’’ কমিটি বদল হলেও পুজোর চেহারা বদলাননি মিলিদেবীরা। চিরকালীন সাবেক রূপেই পুজো চলছে। কুমারী পুজোর আয়োজনও রয়েছে। উৎসবের দিনগুলিতেও পালা করে দায়িত্ব পালন করেন মহিলা সদস্যেরা।

আশপাশে সবাই জাঁকজমকের থিম পুজো করছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ার মণ্ডপে বু়ড়ো আর শিশুদের চেনা হইচই, আনন্দ। এই বিষয়টিই নাড়া দিয়েছিল উত্তর কলকাতার সাবেক এলাকা বিডন রো-র মহিলাদের। তাই প্রায় এক যুগ আগে তৈরি হয়েছিল ‘সুচেতনা’।
শুরু হয়েছিল মহিলাদের পুজো। এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যেরা বলছেন, নেহাত কাগুজে কমিটি হয়ে নয়, এই সংগঠনের মহিলারা বাস্তবেই কোমর বেঁধে পুজো করতে নামেন। কুমোরটুলি থেকে ট্রলিতে চাপিয়ে প্রতিমা আনা হোক কিংবা বিসর্জনের শোভাযাত্রা— প্রতিমাকে ঘিরে থাকেন নারীরাই।

দক্ষিণ কলকাতার বৈজয়ন্ত আবাসনের পুজোতেও রাশ মহিলাদের হাতে। পুজোর মিটিং থেকে ভোগের আয়োজন, সবেতেই সেখানে এগিয়ে প্রমীলারা।

দক্ষিণ শহরতলির পাটুলির ঘোষপাড়া সর্বজনীনেও মহিলারাই সর্বেসর্বা। রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচাতে পুরুষদের হাত থেকে মহিলাদের হাতে পুজোর রাশ চলে আসার প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন