শহর জুড়ে বাজার ফাঁকা, দিন কাটল লোকসানেই

চার পিস ফুলকপি আর এক কেজি টোম্যাটো। বাঘা যতীন বাজারের সব্জি বিক্রেতা বিজয় সাহার দোকানে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা— চার ঘণ্টায় বিক্রি বলতে এটুকুই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৭
Share:

সোমবারের বাজার-চিত্র। কোলে মার্কেটে ছবিটি তুলেছেন দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

চার পিস ফুলকপি আর এক কেজি টোম্যাটো। বাঘা যতীন বাজারের সব্জি বিক্রেতা বিজয় সাহার দোকানে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা— চার ঘণ্টায় বিক্রি বলতে এটুকুই।

Advertisement

দমদমের মাছ ব্যবসায়ী মণ্টু ঘোষের কথায়, ‘‘ধর্মঘটের ডাকের তোয়াক্কা না করে দোকান খুললাম। কিন্তু বাজার তো ফাঁকা।’’

গড়িয়াহাটের আনাজ ব্যবসায়ী মনা সাহার মন্তব্য, ‘‘সোমবার সকালে যা বিক্রি হয়েছে, তাতে দোকানে বাল্ব জ্বালানোর খরচও উঠবে না।’’

Advertisement

মানিকতলা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রভাত দাসও বলছেন, ‘‘সোমবার সকালে বিক্রি সে রকম হয়নি।’’

প্রায় সব দোকান খোলা, বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেছেন, কিন্তু কেনার লোক কম। এ দিন শহরের অধিকাংশ বাজারে ছবিটা ছিল এ রকমই। তার মানে কি ক্রেতারা বামেদের ডাকা ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে বাজারমুখো হননি?

বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা যা জানালেন, তা হল— ধর্মঘটের বিষয়টি বাজার ফাঁকা থাকার অন্যতম কারণ ঠিকই, তবে একমাত্র কারণ নয়। ক্রেতাদের একাংশ এ দিনের অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে রবিবার বেশি করে বাজার সেরে রেখেছিলেন। সেই অংশটাই বাজারমুখো হননি। আবার শনি-রবিবার বন্ধ থাকার পর এ দিন ব্যাঙ্ক খুলেছিল। সাধারণ মানুষের একাংশ তাই বাজারে না গিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানোকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। পরশু, বৃহস্পতিবার মাস পয়লা। সে দিন টাকা তোলার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে পারবেন না, এটা ধরে নিয়ে অনেকেই মাসের শেষ তিন দিনে নগদ তুলে রাখতে চেয়েছেন। সেই তিন দিনের প্রথম দিন ছিল সোমবার। আবার রবিবারের বাজারে ক্রেতাদের সমাগম বেশি থাকার পরে সাধারণত সোমবার অনেক বাজারেই কম লোক যান।

তা বলে ক্রেতাদের সংখ্যা এতটা কম? অনেক ব্যবসায়ীই তা ভাবতে পারেননি। বাঁশদ্রোণী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাবু দাস জানাচ্ছেন, সোমবার সকালে খদ্দের সাধারণত কমই হয়। ৬০ শতাংশের সামান্য বেশি ক্রেতা বাজারে আসেন। সেই জায়গায় এ দিন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি খদ্দের হয়নি। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অন্যান্য সোমবার সকালে ৮-১০ হাজার টাকার মাছ বেচি। এ আজ সকালে বড়জোর ৪ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে।’’ আজাদগড় বাজারের ব্যবসায়ী নিখিল মণ্ডলের হিসেব, ‘‘সকালে পাঁচ ঘণ্টায় মাত্র তিন কেজি মাছ বেচেছি।’’

কোনও কোনও ব্যবসায়ী কিন্তু রবিবারই ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আঁচ করেছিলেন, সোমবারটা কেমন যাবে। ক্রেতারা জানিয়েছিলেন, সোমবার তাঁরা ফের ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াবেন।

সেই কারণে দমদম ও আশপাশের কয়েকটি বাজারে বিক্রেতাদের একাংশ দোকান খোলেননি। যাঁরা বসেছিলেন, তাঁদের কাছেও জিনিসের পরিমাণ ছিল বেশ কম। মাছ ও সব্জি, দু’টি বাজারেই ভিড় প্রায় ছিল না বললেই চলে। নোট বাতিলের পর প্রথম পাঁচ-ছ’দিন বাজারের চেহারাটা যেমন ছিল, এ দিন সেই ছবিই দেখা গিয়েছে।

চাহিদা কম বলে মাছ ও সব্জির দামও কমেছে খানিকটা। ১০-১২ টাকায় বড় মাপের ফুলকপি, পেঁয়াজকলির দামও ১০০ থেকে ৭০ টাকায় নেমে এসেছে। দাম কমেছে গাজর, মটরশুঁটি, মুলো, বেগুন, সিমেরও। আবার ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে দেড় আঙুল সাইজের জ্যান্ত ট্যাংরা, এক কেজির কাছাকাছি ওজনের ভেটকি কেজি প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা, মাঝারি মাপের গলদা ৪০০-৪৫০ টাকা, মাঝারি মাপের পার্শে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে। কিন্তু দাম কম হলেও এ সব কেনার লোকই ছিল কম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন