দুর্যোগের সুযোগে পকেটে কোপ বসাল ওলা-উবের

সোমবার রাত সাড়ে ন’টা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে বাগুইআটি যাবেন জয়ন্ত রায়। হলুদ ট্যাক্সির উপরে ভরসা না করে নিজের স্মার্ট ফোনে ক্যাব বুক করতে গিয়ে চোখ কপালে তাঁর! অন্যান্য দিন যে দূরত্বের ভাড়া খুব বেশি হলে ২৫০ টাকা, বৃষ্টির রাতে সেই দূরত্বের জন্যই গুনতে হবে ৯০০ টাকা! এ যে হলুদ ট্যাক্সিকেও দশ গোল দেবে!

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

সোমবার রাত সাড়ে ন’টা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে বাগুইআটি যাবেন জয়ন্ত রায়। হলুদ ট্যাক্সির উপরে ভরসা না করে নিজের স্মার্ট ফোনে ক্যাব বুক করতে গিয়ে চোখ কপালে তাঁর! অন্যান্য দিন যে দূরত্বের ভাড়া খুব বেশি হলে ২৫০ টাকা, বৃষ্টির রাতে সেই দূরত্বের জন্যই গুনতে হবে ৯০০ টাকা! এ যে হলুদ ট্যাক্সিকেও দশ গোল দেবে! একই রকম অভিজ্ঞতা ফুলবাগানের তনিমা চট্টোপাধ্যায়ের। রাত আটটা নাগাদ ফুলবাগান থেকে বেলঘরিয়া যাওয়ার জন্য ক্যাব বুক করতে গিয়ে দেখেন, ভাড়া দিতে হবে সাড়ে তিন গুণ! জয়ন্তবাবু কিংবা তনিমাদেবী ব্যতিক্রম নন। বৃষ্টির দিনে কিংবা দিনের ব্যস্ত সময়ে অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির ভাড়া এ ভাবেই বেড়ে যাচ্ছে, যার পোশাকি নাম ‘সার্জ প্রাইসিং’।

Advertisement

এ শহরে হলুদ ট্যাক্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। যাত্রীদের অসহায়তার সুযোগ কখন, কী ভাবে নিতে হয়, তা অধিকাংশ চালকই বিলক্ষণ জানেন। একটু রাত হলে বা রাস্তায় জল জমলে তাঁরা যেমন ইচ্ছে ভাড়া হাঁকেন। কিন্তু ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর আধুনিক ক্যাব পরিষেবাও যে তার ব্যতিক্রম নয়, জলভাসি সন্ধ্যায় ফের তার সাক্ষী রইল শহর কলকাতা। অভিযোগ, বৃষ্টিতে নাস্তানাবুদ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আকাশছোঁয়া ভাড়া হেঁকেছে তারা। হলুদ ট্যাক্সির ক্ষেত্রে তবু দরাদরি করা যায়। ‘যাব না’ বললে বা অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে প্রয়োজনে পুলিশেরও সাহায্য নেওয়া যায়। কিন্তু ওলা-উবেরের ক্ষেত্রে তার কোনও উপায় নেই। পুরোটাই ‘বৈধ’ এবং কেন্দ্রীয় ভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত’।

হলুদ ট্যাক্সির ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থা থাকলেও অ্যাপ–ক্যাবের ক্ষেত্রে তা নেই। কিন্তু এই অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির যাত্রীদের কেন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়? চাইলে তাঁরা কার কাছে যাবেন? এর সুনির্দিষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি।

Advertisement

যাত্রী-প্রত্যাখ্যানও অ্যাপ-ক্যাবের আর এক সমস্যা। নিয়ম অনুযায়ী এদের যাত্রীকে প্রত্যাখ্যান করার কথা নয়। কিন্তু এমন ঘটনাও আকছার ঘটছে বলে অভিযোগ। একটু রাত বাড়লেই ওলা-উবেরের চালকেরা গন্তব্য পছন্দ না-হলে যেতে অস্বীকার করছেন। তখন ‘রাইড ক্যানসেল’ করে নতুন করে বুক করা ছাড়া যাত্রীর কিছু করার থাকে না। এই রাইড বাতিল করারও আবার নিয়ম আছে। বুক করার পরে পাঁচ মিনিট পেরোলেই রাইড বাতিল করার জন্য গুনতে হয় মোটা ‘ক্যানসেলেশন ফি’। অথচ, চালকের কোনও শাস্তি হয় না। দমদমের পল্লবী রায় যেমন বললেন, ‘‘রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থেকে আমি ট্যাক্সি বুক করি। চালক গাড়ি নিয়ে এলে তাঁকে বলি, দমদম যাব। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, যেতে পারবেন না। বহু অনুরোধ করা সত্ত্বেও রাজি হননি। উল্টে বলে গেলেন, রাইড বাতিল করে দিন। তখন বেশ কিছু টাকা গচ্চা দিয়ে রাইড বাতিল করতে হল।’’

সুযোগ পেলেই ‘সার্জ’ বাড়িয়ে দিয়ে এত বেশি টাকা কেন চায় অ্যাপ-ক্যাব?

ওলা কর্তৃপক্ষের যুক্তি, অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি চলে চাহিদা ও জোগানের সূত্র মেনে। বর্ষার দিনে, অফিসটাইমে বা কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে ক্যাবের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেলে ভাড়াও বেড়ে যায়। তবে তাঁদের আশ্বাস, কলকাতায় এই অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি বদলে যাবে। বেঙ্গালুরুতেও আগে এই ধরনের সমস্যা হত। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন আর তাই আড়াই-তিন গুণ ভাড়া দিতে হয় না। কলকাতাতেও নাকি তেমনটাই হবে। আর ট্যাক্সি বুক করার পরে চালক প্রত্যাখ্যান করলে? ওলা-কর্তাদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সেই নম্বর কেন অ্যাপের মধ্যে নেই? এর অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

ভাড়ায় ‘সার্জ’ প্রসঙ্গে উবেরের তরফে জেনারেল ম্যানেজার (পূর্ব) অশ্বিন ডায়াস বলেন, ‘‘প্রবল বৃষ্টিতে আমাদের টিম পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ির ব্যবস্থা রাখতে প্রচুর পরিশ্রম করে। কঠিন পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানোয় উৎসাহ দিতে ভাড়া বাড়াতেই হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন