পাথুরিয়াঘাটা

পাথুরিয়াঘাটায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল জীর্ণ বাড়ি, মহিলা-সহ মৃত দুই

দুপুরের বৃষ্টিতেই বাড়ির ভিতর থেকে ঝুরঝুর করে পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছিল। পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে আন্দাজ করে সন্ধ্যাতেই স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলেন বাড়ির বাসিন্দারা। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার মেয়রকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠি, যাতে বাড়িটি অবিলম্বে কলকাতা পুরসভা ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

ভেঙে পড়া সেই বা়ড়ি।

দুপুরের বৃষ্টিতেই বাড়ির ভিতর থেকে ঝুরঝুর করে পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছিল। পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে আন্দাজ করে সন্ধ্যাতেই স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলেন বাড়ির বাসিন্দারা। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার মেয়রকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠি, যাতে বাড়িটি অবিলম্বে কলকাতা পুরসভা ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করে। সেই চিঠি হাতে পেয়ে কাউন্সিলরও গিয়েছিলেন বাড়িটি দেখতে। আর কাউন্সিলরের বাড়ি দেখতে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাঁদের সকলের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ওই পুরনো তেতলা বাড়ি। গভীর রাতে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শ্বেতা রাই (৪০)। তিনি বাড়ির মালিক কমলাপ্রসাদ রাইয়ের পুত্রবধূ। মালিকের অন্য পূত্রবধূ সন্ধ্যা রাই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। কাউন্সিলরের কাছে ছুটে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের বক্তব্য, আর একটু হলে হয়তো সকলে একসঙ্গে চাপা পড়তেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়িটি যখন ভাঙতে শুরু করে, তখন বাসিন্দারা অনেকেই বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। বেরিয়ে এসেছিলেন কমলাপ্রসাদের দুই পুত্রবধূও। কিন্তু কিছু জিনিস আনতে আবার তাঁরা ভিতরে ঢোকেন। তার পরেই একটি বড় অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। যে অংশে তাঁরা চাপা পড়েন, সেখানে ধ্বংসস্তূপ সরাতে সময় লাগছে।

Advertisement

রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার আগেই অবশ্য কলকাতা পুরসভার কর্মীরা, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল, দমকল এবং কলকাতা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে দেয়। হাত লাগায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ঘিরে ফেলা হয় বাড়িটির চারপাশ। পাশের একটি পুরনো তেতলা বাড়িও খালি করে দেওয়া হয়।


উদ্বেগ আর আতঙ্ক। মঙ্গলবার রাতে।

মেয়র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই ওই বাড়ির বাসিন্দারা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলোরা সাহার কাছে আমাকে এবং কমিশনারকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বাসিন্দারা বাড়িটিকে পরিত্যক্ত বলে ঘোষণা করতে অনুরোধ জানান।’’

কাউন্সিলর ইলোরা সাহা বলেন, ‘‘ভাড়াটেরা জানিয়েছিলেন, দুপুরে বৃষ্টির সময়েই ভিতরের পলেস্তারা খসে পড়ছিল। তাঁদের নিয়ে বাড়িটি দেখতে সবেমাত্র পৌঁছেছি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে চোখের সামনে একটা অংশ ভেঙে পড়ল।’’

কলকাতা পুরসভা জানাচ্ছে, বাড়িটি একটি পুরনো আমলের দো-মহলা তেতলা বাড়ি। তার সামনের অংশটি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। কাউন্সিলর জানান, রাত ৮টা ২০ নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। তার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে তিনি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছিলেন।

ইলোরাদেবী বলেন, ‘‘বাড়িটিতে ১০০ জন ভাড়াটে রয়েছেন।’’ একতলায় থাকেন মালিকপক্ষ। আর রয়েছে কয়েকটি কারখানা। দোতলাটিও মালিকপক্ষ আর কারখানার মধ্যে ভাগাভাগি করা। আর তেতলার পুরো অংশটিতেই ভাড়াটেরা থাকেন।

বাড়িটির ভিতরে গেঞ্জি, প্রসাধনী, বাঁধাই-সহ নানা ধরনের কারখানা ছিল। স্বপন ঘোষ নামে জনৈক কারখানা-মালিকের কথায়, ‘‘কিছু ক্ষণের জন্য কারখানা ছেড়ে বেরিয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই খবর পাই বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ছুটে গিয়ে দেখি, শোরগোল চলছে। আমার কারখানাটাও ধ্বংস হয়ে গেল।’’

ছবি: সুমন বল্লভ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন