সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওযুধের দোকান সম্পর্কে মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। তার মধ্যে অন্যতম অভিযোগই ওষুধের মান সম্পর্কে। এ ছাড়াও জেনেরিকের বদলে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ বিক্রি, বহু জরুরি ওষুধ মজুত না থাকা, প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ না কিনলে ওষুধ দিতে অস্বীকার, এমন আরও বহু কিছু। এ বার এক বৃদ্ধ রোগীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধ। তাঁর পায়ে ও কোমরে গুরুতর চোট লেগেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সজলকুমার দাস নামে ওই বৃদ্ধ এসএসকেএম-এর ন্যায্য মূল্যের দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পরে তিনি সুযোগ পান। কয়েকটি প্রচলিত ওষুধের খোঁজ করায় তাঁকে জানানো হয়, সেগুলি মজুত নেই। অত প্রচলিত ওষুধ কেন রাখা হচ্ছে না জানতে চাইলে ওই দোকানের কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন
বলে অভিযোগ। সজলবাবু বলেন, ‘‘এর পরে আমি অন্য কয়েকটি ওষুধ কিনি। বিল হাতে পেয়ে দেখি আমার যা ফেরত পাওয়ার কথা, তার চেয়ে কম টাকা দেওয়া হয়েছে। কাউন্টারে কথাটা বলায় কর্মীরা আমাকে অন্য আর একটি কাউন্টারে গিয়ে কথা বলতে বলেন।’’
অভিযোগ, সেই কাউন্টারে আধ ঘণ্টারও বেশি দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সজলবাবুকে। তার পরে তাঁর কাছ থেকে বিলটি ফেরত নেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। সজলবাবু বলেন, ‘‘আমি টাকার কথা বলায় ওঁরা বলেন, ‘আপনি আর কিছু ফেরত পাবেন না।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করি। লাইনে দাঁড়ানো অন্য ক্রেতারাও আমাকে সমর্থন করেন। আমি জানাই, বিষয়টির নিষ্পত্তি না হলে আমি ওখান থেকে কিছুতেই যাব না। আচমকাই দোকানের কয়েক জন কর্মী কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে আমাকে মারতে শুরু করেন। আমি পড়ে যাওয়ার পরেও রেহাই দেওয়া হয়নি।’’ ঘটনার জেরে বেশ কিছুক্ষণ ওষুধের দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
দোকানের তরফে গোলমালের কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, কাউন্টারের কর্মীরা গালিগালাজ করলেও সজলবাবুকে মারধর করেছিলেন অন্য ক্রেতারা। কিন্তু অন্য ক্রেতারা কেন তাঁকে
মারতে যাবেন? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য দোকানের তরফে
দেওয়া হয়নি।
এসএসকেএমের ন্যায্য মূল্যের দোকানের বিরুদ্ধে এর আগেও ক্রেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বিলের টাকা নিয়ে গরমিলের অভিযোগ উঠেছিল। সজলবাবুর অভিযোগ তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ঘটনার পরে প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলেন সজলবাবু। অভিযোগ, সেখানে বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তখন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই বৃদ্ধ। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘আমার হাঁটুতে এমনই চোট যে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সাধারণ রোগীদের সাহায্য করার জন্য এই প্রকল্প চালু করেছিলেন। সেখানে মানুষের উপরে এমন অত্যাচার হবে কেন?’’
দোকানের তরফে পঙ্কজ ঠাকুর বলেন, ‘‘একটা সমস্যা হয়েছিল। বিল নিয়ে ওঁর কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা সেটা মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। উনি তাতে শান্ত না থেকে গালাগাল শুরু করেন। তখন মাথার ঠিক রাখতে না পেরে আমরাও পাল্টা গালগাল দিই। এই সময়ে লাইনে দাঁড়ানো অন্য ক্রেতারা ওঁকে মারতে শুরু করেন। উনি পড়ে গিয়ে আরও বেশি চোট পান। আমরা পরে সজলবাবুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। কিন্তু তার পরেও উনি থানায় গেলেন।’’
যদি তাঁরা মারধর না-ই করে থাকবেন, তা হলে ক্ষমা চাইলেন কেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর পঙ্কজবাবু দিতে পারেননি।
দোকানটি হাসপাতাল চত্বরে হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টির কোনও দায় নেবেন না বলে জানিয়েছেন। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই প্রতি দিন হাজারো অভিযোগ নিয়ে আমরা জেরবার। ওষুধের দোকানের ব্যাপারটি বরং পুলিশ সামলাক।’’ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে থানা সূত্রের খবর।