অসুস্থ ছেলের কাছে ফেরা হল না মায়ের

অসুস্থ ছেলেকে একাই বাড়িতে রেখে কলকাতায় এসেছিলেন প্রৌঢ়া। বলে এসেছিলেন, কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না প্রৌঢ়ার। মঙ্গলবার সকালে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হল তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৫
Share:

কল্পনা পোড়েল

অসুস্থ ছেলেকে একাই বাড়িতে রেখে কলকাতায় এসেছিলেন প্রৌঢ়া। বলে এসেছিলেন, কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না প্রৌঢ়ার। মঙ্গলবার সকালে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হল তাঁর।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতার নাম কল্পনা পোড়েল (৬১)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার উত্তর রামকৃষ্ণপুরে। এ দিন ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর থানার মোমিনপুর মোড়ে। ঘটনার পরেই বাসচালক জাম্মান মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কল্পনাদেবীর নয় মেয়ে এবং এক ছেলে। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে পঞ্চুর বৌদ্ধিক বিকাশ ঠিক মতো না হওয়ায় তাকে নিয়ে একাই থাকতেন ওই প্রৌঢ়া। মেয়েরাই দেখাশোনা করতেন তাঁকে। মেয়েদের সঙ্গে পাঁপড় তৈরি করে তা একবালপুরের একটি সংস্থায় পৌঁছে দিতেন কল্পনাদেবী। রোজ কলকাতায় এসে ওই পাঁপড় দিয়ে সংস্থা থেকে কাঁচামাল নিয়ে যেতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনও মেয়ে গঙ্গা বাগ ও অন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সেখানে এসেছিলেন প্রৌঢ়া। কাঁচামাল নিয়ে বেরিয়ে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ মোমিনপুর মো়ড়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। সে সময়েই মাঝেরহাট সেতুর দিক থেকে আসা এসডি ৮ রুটের একটি বাস বেপরোয়া ভাবে এসে তাঁকে ধাক্কা মারে।

Advertisement

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ধাক্কার চোটে কল্পনাদেবীর পায়ে আঘাত লাগে। মেয়ে গঙ্গা মাকে রাস্তার ধারে এক জায়গায় বসিয়ে প্রাথমিক শুশ্রূষা করেন। পরে পুলিশ একটি গাড়ি করে প্রৌঢ়াকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, সেখানেই ঘণ্টা দু’য়েক পরে মারা যান কল্পনাদেবী। ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রৌঢ়ার মেয়ে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন আত্মীয়েরা। মেয়েকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কল্পনাদেবীর জামাই বাপি বাগ বলেন, ‘‘রোজ অসুস্থ ছেলেকে বাড়িতে রেখে কলকাতায় আসতেন শাশুড়ি মা। তৈরি পাঁপড় জমা দিয়ে কাঁচামাল নিয়ে যেতেন। জানি না, ওই ছেলেকে কী ভাবে সামলাব।’’

কল্পনাদেবীর এক প্রতিবেশী দেবব্রত শর্মা জানান, ভোরে বাড়ি থেকে বেরোতেন ওই প্রৌঢ়া। পঞ্চুর জন্য বিস্কুট জাতীয় খাবার রেখে দিতেন। বাড়ি ফিরে পাঁপড় বানিয়ে মেয়ের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ছেলেকে খাওয়াতেন। বাপির কথায়, ‘‘মা ছাড়া কারও কথা শুনত না পঞ্চু। তবু দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছি। বুঝলাম না, ও কী বুঝছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন