কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধকে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত দুটো নাগাদ বেনিয়াপুকুরের বেচুলাল রোডে মহম্মদ সাবির নামে ওই বৃদ্ধকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক বাসিন্দা লালবাজারে খবর দেন। ওই রাতেই জখম বৃদ্ধকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, শনিবার রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের অনুমান, কোনও বচসার জেরে অথবা ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই ওই বৃদ্ধকে কোপানো হয়েছে। তাঁর ঘাড়ে, কাঁধে, বুকে, হাতে ধারালো অস্ত্রের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ১৪ নম্বর বেচুলাল রোডের উল্টো দিকে একটি বাড়ির সামনে সিমেন্টের চাতালে রাতে শুয়ে থাকতেন সাবির। তাঁর পরিবার বা আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। সারা দিন ঘুরে ঘুরে জুতোর সোল বিক্রি করতেন। খেতে যেতেন তিরিশ বছরের পুরোনো বন্ধু শেখ পেয়ারার বাড়িতে। পেয়ারা মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলে শেখ আকবর বা তাঁর মেয়ে আকবরি বেগমের বাড়িতে দু’বেলা খেতেন। শুক্রবার রাতেও সিমেন্টের চাতালেই শুয়ে ছিলেন তিনি। ছুরিকাহত হয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় ছুটতে ছুটতে আকবরির বাড়িতেই যান সাবির। আকবরিই ১০০ নম্বরে ফোন করে লালবাজারে খবর দেন।
এ দিন আকবরি জানান, সাবিরকে তিনি চাচা বলেন ডাকতেন। অত রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি বেজায় ঘাবড়ে যান। কে বা কারা তাঁকে ওই ভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাল, তা জানতে চান আকবরি। কিন্তু তার জবাব দিতে পারেননি সাবির। তাঁর কাছে জল খেতে চান চাচা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে সাবির আকবরিকে বলেন, তিনি কিছুই করেননি। তাঁকে খামোখা কোপানো হল।
এ দিন আকবরির দাদা আকবর জানান, তাঁদের পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা জুতো তৈরির কারবারে যুক্ত। দিনেরাতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। আকবরের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের পাড়ায় বেশি রাত পর্যন্ত বহিরাগত যুবকেরা আড্ডা মারতে আসছে। সন্ধ্যা হলে পাড়ায় নেশার আসরও বসছে বলে সাবিরের অভিযোগ। নেশাগ্রস্ত যুবকদের কেউ সাবিরকে খুন করে থাকতে পারেন বলে আকবরের সন্দেহ।
তদন্তকারীরা জানান, ১২ নম্বর বেচুলাল রোডে পাঁচতলা একটি বহুতলের মেন গেটে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ওই বহুতলের সামনে দিয়েই সাবিরকে রক্তাক্ত অবস্থায় আকবরির বাড়ির দিকে যেতে দেখার ফুটেজ মিলেছে। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আরও ভাল করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে আততায়ীদের দেখা গিয়েছে কি না, তা তদন্তকারীরা জানাতে পারেননি।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাবিরের শুয়ে থাকার জায়গায় চাপ চাপ রক্ত। রক্তের দাগ বেচুলাল রোডের একাধিক জায়গায়। আকবরিদের বাড়ির সামনেও রক্তের দাগ। সাবিরের মতো এক জন নিরীহ, নির্বিরোধ মানুষকে কে বা কারা কেন খুন করল, তা ভেবেই কূল পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা।