‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের টাকা পেতে গিয়ে প্রতারিত সত্তরোর্ধ্ব হতদরিদ্র মহিলা

সেই টাকা উদ্ধারে এখন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কলকাতা পুরভবনে ছোটাছুটি করছেন তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ওই ছ’হাজার যে তাঁর পরিবারের কাছে অনেকটা টাকা, সে কথা বোঝাতে গিয়ে অফিসারদের সামনে কেঁদেও ফেলছেন ওই মহিলা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

অসহায়: কল্পনা ভাণ্ডারী। বুধবার, বেহালায়। নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা আবাসন প্রকল্প ‘বাংলার বাড়ি’র জন্য আবেদন করে প্রতারকের পাল্লায় পড়লেন বেহালার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব এক দরিদ্র মহিলা। খোয়ালেন ছ’হাজার টাকা।

Advertisement

সেই টাকা উদ্ধারে এখন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কলকাতা পুরভবনে ছোটাছুটি করছেন তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ওই ছ’হাজার যে তাঁর পরিবারের কাছে অনেকটা টাকা, সে কথা বোঝাতে গিয়ে অফিসারদের সামনে কেঁদেও ফেলছেন ওই মহিলা।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনে দরিদ্রদের জন্য চালু হওয়া ওই আবাসন প্রকল্পে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন বেহালার মুচিপাড়া এলাকার বাসিন্দা কল্পনা ভাণ্ডারী। কবরডাঙায় একচিলতে জমি রয়েছে তাঁর। কিন্তু টাকার অভাবে ঘর বানাতে পারেননি। এখন থাকেন ভাড়াবাড়িতে। এক দিন জানতে পারেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে একটি অফিস আছে। সেখানে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রবার্ট বঢরাকে ইডি-র জেরা ছ’ঘণ্টা, স্বামীর পাশে আছি, বললেন প্রিয়ঙ্কা

সেই মতো জানুয়ারির শেষের দিকে ওই প্রকল্পের ব্যাপারে বিশদে জানতে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে মুখ্যমন্ত্রীর এক অফিসে গিয়েছিলেন কল্পনাদেবী। তিনি জানান, সেখানে দরখাস্ত জমা দেওয়ার পরে তাঁকে একটি ফর্ম দিয়ে সেটি পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়।

পরের দিনই তা পূরণ করে জমা দেন কল্পনাদেবী। ফর্মে বাড়ির ঠিকানা, যোগাযোগের মোবাইল নম্বর-সহ সবই দেওয়া হয়। এর দিন দু’য়েক পরে ফের ওই অফিসে যান কল্পনাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘তখন আমাকে বলা হয়, ‘এত তাড়াতাড়ি কিছু হবে না। কয়েক দিন অপেক্ষা করুন’।’’

কল্পনাদেবীর বৌমা বলেন, ‘‘৩০ জানুয়ারি একটা ফোন আসে। এক জন বলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে বলছেন। আমার শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে চান।’’ কল্পনাদেবী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমাকে বলেন, আমার আবেদনটি অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। এ বার টালিগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কে ৬০৭৫ টাকা ফরিদা বিবি নামে কারও অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। অ্যাকাউন্টের নম্বরও বলে দেন। তার পরে কী করণীয়, পরে জানাবেন বলেন।’’

আরও পড়ুন: পাল্টা হলফনামা পেশ করতে পারেন রাজীব​

এর পরে দ্রুত ওই টাকা জোগাড় করে সেই ব্যাঙ্কে গিয়ে জমা দেন কল্পনাদেবীর পুত্রবধূ মীনা ভাণ্ডারী। তখন বিকেল হয়ে গিয়েছে। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তাতে ফোন করেন কল্পনাদেবী। সেই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘এ বার টাকা জমা দেওয়ার স্লিপটা নিয়ে ভবানী ভবনের কাছে পুরসভার অফিসের চারতলায় চলে আসুন।’ সেই মতো কল্পনাদেবীরা সেখানে পৌঁছে যান। কিন্তু ওই ব্যক্তির আর সন্ধান পাননি। তাঁর ফোন লাগাতার বন্ধই ছিল। ওই অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের কোনও কর্মী কল্পনাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

কল্পনাদেবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ৩১ জানুয়ারি ফের কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। সেখানকার অফিসারের পরামর্শে ১ ফেব্রুয়ারি বেহালা থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়।

কলকাতা পুর ভবনেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুরসভার এক অফিসার বলেন, ‘‘এই ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ফর্মে দেওয়া ফোনের নম্বর জেনে প্রতারণা করা হয়েছে।’’ ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে কলকাতা পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ নতুন। ভবিষ্যতে পুর প্রশাসন অবশ্যই সতর্ক হবে। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ তবে তিনি জানান, কলকাতা পুরসভায় ওই আবেদন জমা পড়েনি। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন