একদিনের ওসি এই মেয়ে দাপটে সামলাল ট্র্যাফিক!

ব্রেবোর্ন রোডে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের সামনে পুলিশের জিপের সামনের আসন থেকে নেমে এলেন মোনালিসা পোয়ালি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৩
Share:

এক দিনের ওসি (ট্রাফিক) মোনালিসা পোয়ালিকে স্যালুট এক পুলিশকর্মীর। মঙ্গলবার। — বিশ্বনাথ বণিক

ব্রেবোর্ন রোডে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক গার্ডের সামনে পুলিশের জিপের সামনের আসন থেকে নেমে এলেন মোনালিসা পোয়ালি। পরনে নীল রঙের প্যান্ট-কোট। মাথায় সাদা টুপি, হাতে ওয়াকিটকি। জিপ থেকে নেমে গটগট করে দোতলায় উঠে গেলেন। সপ্রতিভ চোখ-মুখ। সামান্য জড়তাও নেই। দোতলায় অফিসে ঢোকার মুখে অফিসারেরা ‘ম্যাডাম’কে স্যালুট করতেই সুইং ডোর ঠেলে ঢুকে গার্ডের ওসি-র চেয়ারে গিয়ে বসলেন তিনি।

Advertisement

অফিসারেরা কিছু ফাইল এনে ধরলেন সামনে। তাতে চোখ বুলিয়ে পাশের ঘরের জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে হাজির হয়ে গেলেন। এলাকার ট্রাফিক চলাচলের খণ্ডচিত্র ফুটে উঠছিল স্ক্রিনে। তা খুটিয়ে দেখলেন মোনালিসা। পাশের ঘরে যেখানে বিভিন্ন অভিযোগ জমা রয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখতে চাইলেন সেগুলিও।

এতক্ষণে একটু সময় পেয়ে সংবাদপত্রের প্রতিনিধি দু’টি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তাঁর দিকে। একদৃষ্টে চেয়ে মোনালিসা বললেন, ‘‘শুধুমাত্র গাড়ির চালক বা ট্রাফিক আইনকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। পথচারী কিংবা সাধারণ মানুষকেও নাগরিক হিসেবে আইন মেনে চলার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’’ তার আগে এ দিন সকালে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের তাবড় কর্তাদের সামনে বসে বেশ দৃঢ় গলায় মোনালিসাকে বলতে শোনা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডে রাখা মনিটরে যখনই কোনও চালককে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে দেখা যাবে, তাকে চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Advertisement

কে এই মোনালিসা? ‘ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ’ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ চলছে। আয়োজনে কলকাতা পুলিশই। শহরের একশো স্কুলের কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী পুলিশের অনুরোধেই ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে রচনা লিখে জমা দিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম ২৫ জনকে নিয়ে এসে মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের ২৫টি ট্রাফিক গার্ডে এক দিনের জন্য ওসি-র মর্যাদা দেওয়া হবে। মোনালিসা সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল। সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মোনালিসা কাটিয়েছে লালবাজার ও ট্রাফিক গার্ডে। মাঝে জিপে করে বেরিয়েও পড়েছিল। এক সময়ে মহাকরণের সামনে মঙ্গলবারের ব্যস্ত সময়ে ওয়াকিটকি নিয়ে চৌরাস্তার গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণও করতে দেখা গিয়েছে তাকে। এ দিন সকাল সাড়ে দশটায় লালবাজারে জড়ো হয়েছিল ওই ২৫ জন পড়ুয়া। এরা সবাই অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।

কিছু ক্ষেত্রে এই প্রজন্মের দেখার নজর ভিন্ন। তাতে এমন অনেক কিছু ধরা পড়ে, যা হয়তো অভিজ্ঞ চোখেও অনেক সময়ে ধরা পড়ে না। যেমন লালবাজারে কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে গোখেল মেমোরিয়ালের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অহনা চট্টোপাধ্যায়কে সুর চড়িয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘এখন হকারেরা যে ভাবে ফুটপাথ দখল করে রাখেন, তাতে বাধ্য হয়েই পথচারীদের অনেক সময়ে রাস্তায় নেমে পড়তে হয়। এ ভাবেও তো দুর্ঘটনা ঘটে। আর দুর্ঘটনা এড়াতে ফুটপাথ ফাঁকা করা দরকার।’’

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির সুচেতন চন্দর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে অটোচালকেরা যাদবপুর থেকে গড়িয়া মোড় পর্যন্ত যেতে চান না। বাঘাযতীন পর্যন্ত যান। তখন অটো ধরতে ছুটোছুটি করতে হয়। এ ভাবেও দুর্ঘটনা ঘটে।’’ অটোচালকদের এমন খামখেয়ালিপনা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে সুচেতন চলে যায় যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডে ওসি-র দায়িত্ব নিতে।

ডিসি ট্রাফিক সলোমন নেসাকুমার জানিয়েছেন, এই পরামর্শগুলি মেনে চলার চেষ্টা করবে পুলিশ। কতটা মেনে চলা হবে তা অবশ্য সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন