রিসোল টায়ার লাগিয়েই দৌড়চ্ছে বাস, আটকাবে কে

সকালবেলা কাজে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা এক প্রৌঢ়া। খন্না মোড়ের কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে দুই বাসের রেষারেষির বলি হন তিনি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০২:০৮
Share:

প্রায় মসৃণ হয়ে যাওয়া এমন চাকা লাগিয়েই চলছে বাস। নিজস্ব চিত্র

সকালবেলা কাজে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা এক প্রৌঢ়া। খন্না মোড়ের কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময়ে দুই বাসের রেষারেষির বলি হন তিনি। শ্যামবাজারের দিক থেকে আসা ওই দুই বাসের একটির চাকায় পিষ্ট হন প্রৌঢ়া। চালককে গ্রেফতার করার পরে পুলিশ জানতে পারে, বেশ খানিকটা আগে ব্রেক কষলেও বাস সেখানে না থেমে এগিয়ে এসে প্রৌঢ়াকে ধাক্কা মারে।

Advertisement

বেশ কয়েক মাস আগের এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ জেনেছিল, রিসোল টায়ারের কারণেই ব্রেক কষেও চাকা থামানো যায়নি। তবে শহরের বুকে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে যখন তখন ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন বাসযাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতা থেকে জেলা, সর্বত্রই এখনও রমরমিয়ে চলছে রিসোল টায়ার। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাসের চাকায় যে খাঁজ থাকা প্রয়োজন, তা একেবারে মিলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিয়মিত নজরদারির অভাবে তেমন চাকাতেই ভর করে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে।

ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, দূরপাল্লার বাসগুলির অবস্থা ততটা খারাপ না হলেও শহর থেকে শহরতলির রুটের অনেক বেসরকারি বাসের চাকাই পুরো মসৃণ হয়ে গিয়েছে। এমন চাকার দেখা মিলল সরকারি বাসেও। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের একটি বাসের পিছন দিকের চাকায় একটি খাঁজও নেই। সবই ঘষে গিয়ে সমান হয়ে গিয়েছে। আবার দেখা গেল, কয়েকটি জায়গায় ডাঁই করে রাখা রয়েছে সমান হয়ে যাওয়া চাকা। সেগুলি ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, ‘‘এই চাকা নিয়ে যাওয়া হয় কারখানায়। সেখানেই নতুন করে ফের চাকা বানানো হয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাসচালকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, শিয়ালদহ, রাজাবাজার এলাকার কয়েকটি জায়গায় রয়েছে রিসোল টায়ার তৈরির কারখানা। সেখানে টায়ারের সমান হয়ে যাওয়া অংশ কেটে তুলে নেওয়া হয়। তার পরে মেশিনের মাধ্যমে ফের তাতে খাঁজ কেটে বিশেষ আঠার মাধ্যমে টায়ারের উপরে আটকে দেওয়া হয়। সেগুলিই রিসোল টায়ার বলে পরিচিত। বাসের পিছনের চাকার টায়ারে মোটা এবং সামনের চাকার টায়ারে সরু খাঁজ কাটা থাকার কথা। কিন্তু রিসোল টায়ারের ক্ষেত্রে সেই মান ঠিক থাকে না বলেই অনেক সময়েই ব্রেক কষলেও চাকা নিয়ন্ত্রণে আসে না।

কিন্তু রিসোল টায়ারে ঝুঁকি আছে জেনেও তা ব্যবহার করা হয় কেন?

মালিক ও চালকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, খারাপ রাস্তা ও ট্রাম লাইনের কারণে টায়ার তাড়াতাড়ি খারাপ হয়। পিছনের চাকার নতুন এক জোড়া টায়ারের দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা। আর সামনের এক জোড়া টায়ারের দাম ১০-১৮ হাজার টাকা। এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘বছরে দু’তিনবার টায়ার বদলাতে বললে তো সমস্যা। এত দাম দিয়ে টায়ার কিনলে লাভ হবে কী করে? তাই রিসোল টায়ার কেনা হয়।’’ রিসোল টায়ারের দাম কত? জানা যাচ্ছে, ৩-৪ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে রিসোল টায়ারের দাম। দূরপাল্লার বাস মালিকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের গাড়ির ক্ষেত্রে টায়ার সাধারণত ৭৫ শতাংশ খারাপ হলেই বদলানো হয়।

কিন্তু রিসোল টায়ার আটকাতে প্রশাসন কতটা তৎপর?

রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর গাড়ির সিএফ (সার্টিফিকেট অব ফিটনেস) করার সময়ে আগে বাসের চাকা পরীক্ষা করা হয়। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, সেই পরীক্ষায় নতুন টায়ার লাগিয়ে পাশ করে গেলেও পরে কী হচ্ছে, সেটা দেখার কেউ নেই।

যদিও রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সারা বছরই পুলিশের নজরদারি চলে। পাশাপাশি দফতরের তরফেও বছরে দু’বার এক সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান চালানো হয় টায়ারের স্বাস্থ্য পরীক্ষায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই রিসোল টায়ার ব্যবহার করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে আধিকারিকদের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন