রাজ্যের সব পুরসভার কর্মীর হাজিরা এ বার থেকে অনলাইনেই নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হতে চলেছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘‘১২টায় অফিস আসি ২টোয় টিফিন, ৩টেয় যদি দেখি সিগন্যাল গ্রিন...।’’ ৯০-এর দশকে নচিকেতা চক্রবর্তীর লেখা এই গানটিতে নিশানা করা হয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের। একই অভিযোগ বিভিন্ন পুরসভার আধিকারিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধেও। সেই অভিযোগের সুরাহা করতে পশ্চিমবঙ্গের সব পুরসভার কর্মীর হাজিরা এ বার থেকে অনলাইনেই নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হতে চলেছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা) এই উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে প্রতি দিন অফিসে এসে জিয়ো-ট্যাগিং করে উপস্থিতি জানাতে হবে প্রত্যেক পুরকর্মী ও আধিকারিককে। সম্প্রতি সুডা রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার আধিকারিককের সঙ্গে বৈঠকে এই নতুন ব্যবস্থার কথা বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছে।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, অ্যাপটি ব্যবহার করতে হলে প্রতিটি কর্মীর সুনির্দিষ্ট তথ্য আগে থেকেই অ্যাপে প্রবেশ করিয়ে অনলাইনে আপলোড করতে হবে। সেই কারণে ইতিমধ্যে রাজ্যের সব পুরসভার কর্মী ও আধিকারিকের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং অনেক জায়গায় আপলোডের কাজও এগোচ্ছে। বর্তমানে কলকাতা পুরসভা, বিধাননগর পুরসভা-সহ কয়েকটি পুরসভায় নিজস্ব উদ্যোগে অনলাইনে হাজিরা নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে এই প্রথম রাজ্যের সব পুরসভা মিলিয়ে এককেন্দ্রিক হাজিরা নথিভুক্তকরণ চালু হতে চলেছে সুডার পর্যবেক্ষণে।
পুরসভার এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার, দফতরের কর্মী থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি আধিকারিক— সবাইকে এই নতুন অ্যাপের মাধ্যমে হাজিরা দিতে হবে। ফলে কর্মীদের কারও পক্ষে বাড়ি থেকে বা অন্য কোথাও বসে হাজিরা দেওয়া, কিংবা অফিসে ঢোকা-বেরোনোর সময় নিজের মতো ঠিক করে নেওয়া আর সম্ভব হবে না। বহু পুরসভায় দীর্ঘ দিন ধরে কর্মীদের দফতরে উপস্থিতি ও সময়ানুবর্তিতা নিয়ে অভিযোগ উঠছিল। যখন ইচ্ছে তখন অফিসে ঢুকে পড়া, অথবা মাঝপথে কাজ ফেলে বেরিয়ে যাওয়ার মতো অনিয়মও ধরা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই পরিস্থিতিতে পুরসভাগুলিতে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা আনতেই এই অনলাইন হাজিরা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন অ্যাপ চালুর ফলে প্রতিটি কর্মীর অবস্থান জিয়ো-ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে যাচাই করা যাবে, যা হাজিরায় স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি কাজের গতি বাড়াতেও সাহায্য করবে বলে প্রশাসনের ধারণা। সুডা জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই প্রকল্প রাজ্য জুড়ে চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ শুরু হলে পুরসভা পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে বলে প্রশাসনের একাংশের মত।