বিকাশ ভবন

নেই পানীয় জল বা শৌচাগার, ঠান্ডায় কাহিল পার্শ্বশিক্ষকেরা

তাঁদের বেতন কাঠামো এবং স্থায়ীকরণের দাবিতে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ আন্দোলন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪২
Share:

জবুথবু: সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ মঞ্চে পার্শ্বশিক্ষকেরা। শুক্রবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ভরসা মাথার উপরের আচ্ছাদনটুকুই। চারদিক খোলা। ফলে শুক্রবার রাত বাড়তেই হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকতে শুরু করে পার্শ্বশিক্ষকদের বিক্ষোভ মঞ্চের ভিতরে। কিন্তু পানীয় জল বা শৌচাগারের এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। প্রথম রাতে আন্দোলনের এই অভিজ্ঞতা থেকে পাঠ নিয়ে শনিবার রাতে ঠান্ডা ঠেকাতে তাঁরাই বিক্ষোভ মঞ্চের চারদিক প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। মাটিতে খড় বিছিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও ঠান্ডা আটকানো যাচ্ছে না, জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু পানীয় জল আর শৌচাগারের এখনও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি।

Advertisement

তবে ঠান্ডা যতই বাড়ুক টানা বিক্ষোভ আন্দোলন যে তাঁরা বন্ধ করছেন না, এ দিন তা স্পষ্ট জানিয়েছেন পার্শ্বশিক্ষকেরা।

তাঁদের বেতন কাঠামো এবং স্থায়ীকরণের দাবিতে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ আন্দোলন। পার্শ্বশিক্ষকদের ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিধাননগর পুলিশ তাঁদের বিকাশ ভবনের সামনে বসার অনুমতি দেয়নি। হাইকোর্ট থেকে তাঁরা অনুমতি নিয়ে এসেছেন। মধুমিতাদেবীর দাবি, “বিকাশ ভবন থেকে ১০০ মিটার দূরে আমাদের বসার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে করোনা-বিধি মেনে আমরা ৭০০ জনের বেশি বিক্ষোভ মঞ্চে থাকতে পারব না। তাই সেটা মেনেই আন্দোলন করছি।”

Advertisement

শুক্রবার দিনের বেলায় মঞ্চে সাতশোর মতো আন্দোলনকারী ছিলেন। পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের আরও এক যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ জানান, রাতে ২৫০ থেকে ৩০০ জন শিক্ষক বিক্ষোভ-মঞ্চে ছিলেন। রাত যত বেড়েছে, তত শীতে কাবু হয়েছেন তাঁরা। ভগীরথবাবু বলেন, “শুক্রবার রাতে ঠান্ডায় খুব কষ্ট পেয়েছেন শিক্ষকেরা। চারদিক ঢাকার ব্যবস্থা ছিল না। ফাঁকা চত্বরে একটা কম্বল দিয়ে ঠান্ডা মোকাবিলা করা যাচ্ছিল না।” সেই খবর শুনে কয়েক জন পার্শ্বশিক্ষক শনিবার সকালেই মঞ্চের মাটিতে বিছিয়ে দেওয়ার জন্য খড় নিয়ে এসেছেন। চারদিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিক দিয়ে। তবে ডিসেম্বরের রাতের ঠান্ডা তাতেও বাগ মানবে বলে মনে করছেন না আন্দোলনকারীরা।

ভগীরথবাবুদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফ থেকে এ বার ঠান্ডা মোকাবিলার ব্যবস্থা তো দূর, বিক্ষোভ মঞ্চে পানীয় জলও দেওয়া হয়নি। নেই বায়ো টয়লেট। আন্দোলনকারী মহিলা শিক্ষকেরা এতে খুবই অসুবিধায় পড়ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত বছর একই দাবিতে ১১ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনে বসেছিলেন। তখন প্রশাসন থেকে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। বায়ো টয়লেটও ছিল। মধুমিতাদেবী বলেন, “দিন-রাতের লাগাতার আন্দোলনে শিক্ষিকারাও রয়েছেন। শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা সকলের জন্য জরুরি। প্রশাসন কি এটুকু দিতে পারে না?”

তবে কোভিড আবহের এই বিক্ষোভে দূরত্ব-বিধি মেনে আন্দোলনকারীরা যেন মাস্ক পরে থাকেন, সেই অনুরোধ করা হচ্ছে ঐক্যমঞ্চের তরফে। আন্দোলন মঞ্চ তাঁরাই জীবাণুুমুক্ত করার ব্যবস্থা করেছেন। এ দিন ভগীরথবাবু বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমরা স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। আলোচনায় বসেছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। তাই এই ঠান্ডায় কোভিড ভীতিকে উপেক্ষা করে ফের আন্দোলনে বসতে বাধ্য হয়েছি।”

যদিও শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, পার্শ্বশিক্ষকদের দাবি ধাপে ধাপে পূরণ করা হচ্ছে। পার্থ বলেন, “পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। ওঁরা অনেক বার আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পর্যায়ক্রমে কিছু দাবি মেটানো হচ্ছে। পার্শ্বশিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধাও আগের থেকে বেড়েছে। অন্যান্য রাজ্যে যখন করোনা-আবহে শিক্ষকদের বেতন অনিয়মিত হয়েছে, আমরা কিন্তু পার্শ্বশিক্ষক-সহ শিক্ষকদের সকলকে নিয়মিত বেতন দিয়েছি। ওঁদের বেতন কাঠামো তৈরি নিয়ে পর্যালোচনা করছি। ভোটের পরে এগুলি চিন্তাভাবনায় রাখব।”

এ দিকে পানীয় জল, শৌচাগারের মতো জরুরি পরিষেবা দিয়ে কতটা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো যায়, সে দিকটি দেখার আশ্বাস দিয়েছে বিধাননগর পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন