বাসে জখম সন্ধ্যা পাত্র। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে হাওড়া স্টেশনে যাচ্ছিলেন রিঙ্কি বিশ্বাস। বাসে বসেছিলেন চালকের কেবিনের পাশের সিটে। দ্রুত গতিতে ছুটে চলা বাসটি আচমকাই কেঁপে উঠল! সিট থেকে ছিটকে বাসের মেঝেয় পড়লেন রিঙ্কি। তার উপরে সহযাত্রীরা। আতঙ্ক, যন্ত্রণায় চিৎকার বাস জুড়ে। কিন্তু ভাবলেশহীন মুখে গাড়ি ছুটিয়ে চললেন চালক।
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ এমনই আতঙ্কের সফর করলেন ৩৭/এ রুটের একটি বাসের যাত্রীরা। পুলিশ জানিয়েছে, রবীন্দ্র সদনের কাছ থেকে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন চালক। অভিযোগ, যাত্রীদের অনুরোধ, হুঁশিয়ারি— কিছুতেই কান দেননি। এমনকী, যাত্রীরা পড়ে চোট পেলেও হুঁশ ছিল না তাঁর। প্রায় এক কিলোমিটার ওই ভাবে বাস চালানোর পরে পালানোর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। যাত্রীদের বাধায় শেষমেশ পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে বাস থামাতে বাধ্য হন ওই চালক। যাত্রীদের চিৎকারে ছুটে আসেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের ওসি জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য অফিসারেরা। পরে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মহাদেব মান্না নামে ওই চালককে গ্রেফতার করে শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রিঙ্কি বিশ্বাস ও সন্ধ্যা পাত্র নামে দুই মহিলা-সহ তিন যাত্রী আহত হয়েছেন। সন্ধ্যার মাথায় আঘাত লেগেছে, রিঙ্কুর কোমরে। তবে তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যাদেবী পুলিশকে জানান, বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালাতে চালককে নিষেধ করেছিলেন তিনি। তাতে কান দেননি মহাদেব।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ৩৭/এ রুটের ওই বাসটি হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পেরোতেই চালক বাসের গতিবেগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। সেই সময়ে বাসটির পিছনে ছিল হাওড়াগামী ৪১ নম্বর রুটের অন্য একটি বাস। পুলিশ সূত্রের দাবি, পিছন থেকে একই রুটের আরও একটি বাস আসতে দেখেই গাড়ির বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওই চালক। পুলিশের কাছে বাসচালকের অবশ্য দাবি, ময়দানের কাছে আচমকা একটি প্রাইভেট গাড়ি বাসের সামনে এসে পড়েছিল। দুর্ঘটনা এড়াতেই তাঁকে ব্রেক কষতে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এর ফলে তীব্র ঝাঁকুনি হয়। তাতেই ছিটকে পড়েন বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীরা। তাঁদের চিৎকারে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে চালক বাসটিকে থামিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ক্ষিপ্ত যাত্রীরা অভিযুক্ত চালককে মারধরও করেন বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীরা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। মহাদেবকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, মহাদেবের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে বাস চালানো এবং ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙার অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
শহরে বাসের রেষারেষির ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে বাসের রেষারেষির জেরে মৃত্যুও হয়েছে যাত্রীদের। কখনও বা শরীর থেকে হাত কেটে আলাদা হয়ে গিয়েছে। ফের ভরদুপুরে এমন ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কি তবে আদৌ সচেতন নন বাসকর্মীরা? বাসমালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্স-এর কর্তা তপন বন্দোপাধ্যায় জানান, ওই বাসচালক আইন ভেঙে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বাসের রেষারেষি চলতে থাকায় উদ্বিগ্ন পুলিশও। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেপরোয়া অটোর বিরুদ্ধে অভিযানের মতো এ বার বাসের ক্ষেত্রেও অভিযান করা হবে।