ব্যস্ত সকালে মেট্রোয় আগুন, আতঙ্ক-দুর্ভোগ

এ বার আর যান্ত্রিক ত্রুটি বা সময়ের বিলম্ব নয়। একেবারে আগুন! মেট্রো রেলের সাম্প্রতিক দুর্ভোগের তালিকায় নয়াতম সংযোজন। আর তার জেরেই আতঙ্ক, আশঙ্কা, হয়রানি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকল দক্ষিণ কলকাতার একটি অংশে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৭
Share:

বেরিয়ে আসছেন শঙ্কিত যাত্রীরা। মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে, বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

এ বার আর যান্ত্রিক ত্রুটি বা সময়ের বিলম্ব নয়। একেবারে আগুন! মেট্রো রেলের সাম্প্রতিক দুর্ভোগের তালিকায় নয়াতম সংযোজন। আর তার জেরেই আতঙ্ক, আশঙ্কা, হয়রানি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকল দক্ষিণ কলকাতার একটি অংশে। ধাক্কাধাক্কিতে আহত হলেন বেশ কিছু যাত্রী। বুধবার সকালের ব্যস্ততম সময়ে বাঁশদ্রোণী এলাকার মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে এমনই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও দুর্ভোগের সাক্ষী হলেন মেট্রোর নিত্যযাত্রীরা। তার জেরে আরও এক বার প্রশ্ন উঠে গেল শহরের অন্যতম এই গণপরিবহণের নিরাপত্তা নিয়ে।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছুঁইছুঁই। ভরা অফিসটাইমে বাঁশদ্রোণী এলাকার সূর্য সেন মেট্রো স্টেশনে রোজকার মতোই যাত্রীদের ভিড় ছিল এ দিন। ডাউন লাইনে অর্থাৎ, গড়িয়ার দিকে যাওয়ার জন্য একটু কম, আপ লাইনে অনেকটা বেশি। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা দেখেন, নির্দিষ্ট সময় ৮:৫৮-এ প্ল্যাটফর্মে ঢোকা কবি সুভাষগামী একটি এসি মেট্রোর পিছনের কামরার তলার দিকে হঠাৎ আগুন জ্বলতে শুরু করল। দেখেই উদ্বেগ ও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে প্ল্যাটফর্মে। যদিও মেট্রোরেল সূত্রের খবর, আগুন কামরায় নয়, লেগেছিল তৃতীয় লাইনে। অর্থাৎ, যে লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়। সেখানে কোনও কারণে একটি স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। সেই সময়ে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকে পড়ায় কামরার নীচটা ছুঁয়ে ফেলে আগুন।

তখনও কিন্তু ট্রেনের ভিতরের যাত্রীরা জানেন না, তাঁদেরই পায়ের তলায় জ্বলছে কামরার তলারই একটি অংশ। ইতিমধ্যেই ভয়ঙ্কর শব্দ করে একটি বিস্ফোরণও ঘটে ওই অংশে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আতঙ্কের চেহারা নেয় প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া উদ্বেগ, আশঙ্কা। স্টেশনের বাইরে বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় যাত্রীদের মধ্যে। চলমান সিঁড়িগুলির মুখে ভিড় জমে বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। ধাক্কাধাক্কিতে ছোটখাটো চোট পান বেশ কয়েক জন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘কামরার তলাটা ওই ভাবে জ্বলতে দেখেই ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তার পরেই ভীষণ শব্দ করে বিস্ফোরণ হল। তখনই প্রাণ হাতে করে বেরোনোর জন্য দৌড়ে যাই সিঁড়ির দিকে।’’

Advertisement

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আপ এবং ডাউন দু’টি লাইনেই ট্রেন থেকে সমস্ত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনের তিনটি গেট দিয়ে সকলকে বার করতে শুরু করেন আরপিএফ কর্মীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্টেশন খালি করে কর্ডন করে ফেলেন তাঁরা। তত ক্ষণে স্টেশনে মজুত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছেন মেট্রোকর্মী ও আরপিএফ। প্রাথমিক ভাবে নেভানো হয় আগুন। খবর যায় দমকলেও। তিনটি ইঞ্জিন এসে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। ইতিমধ্যে মেট্রো রেলের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থলে এসে ত্রুটি পরীক্ষা করেন।

এই গোটা সময়টায়, এক ঘণ্টার উপরে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত। দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হন বহু মানুষ। অনেকেই অফিসে পৌঁছতে পারেন না সময়ে, কারও আবার হাসপাতালের জরুরি কাজে দেরি হয়ে যায়। স্কুলে যেতে দেরি হয় বহু পড়ুয়ার। ওই ব্যস্ত সময়ে ভিড় বাসে ওঠা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমন দুর্ভোগের মুখে পর্যাপ্ত নয় অটো পরিষেবাও। অবশেষে দশটা বেজে পাঁচ মিনিটে স্বাভাবিক ট্রেন চলাচলের কথা ঘোষণা হয়।

দমকল সূত্রের খবর, তাঁরা ঘটনাস্থলে এসেই হোসপাইপ নিয়ে পৌঁছে যান রেকের কাছে। তত ক্ষণে আগুন নিভে গেলেও, ধোঁয়া উঠছিল। পর্যাপ্ত জল দিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারও তাঁর দল নিয়ে এসে পরীক্ষা করতে শুরু করেন। তবে ঠিক কী কারণে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হল থার্ড লাইনে, কী করেই বা বিস্ফোরণ হল, তা এখনও জানা যায়নি বলেই মেট্রো সূত্রের খবর। মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগকারী আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রেন ঢোকামাত্র ও রকম আগুন দেখেই
সঙ্গে সঙ্গে লাইনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচলও। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’’

তবে ক্ষতির হিসেব তো কেবল জিনিসপত্র দিয়ে হয় না। সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে যে দুর্ভোগের মুখোমুখি হলেন যাত্রীরা, তা নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, কম সময়ে অনেকটা দূরত্ব যাওয়ার জন্য মেট্রোর বিকল্প নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এ রকম বিপত্তি ঘটলে, সেই ‘কম সময়’-এর আর অর্থ থাকে না। তার উপরে যদি এ রকম আগুন-আতঙ্কের মুখে পড়তে হয়, তা হলে তো নিরাপত্তা নিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন