শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে উল্টোডাঙার দূরত্ব খুব বেশি হলে সাড়ে তিন কিলোমিটার। অভিযোগ, বেশির ভাগ অটো চালক উল্টোডাঙা যেতে চান না। হাতিবাগান, খন্না গিয়ে ফিরে আসেন শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে। যাঁরা উল্টোডাঙা যান, তাঁরা ১০ টাকার ভাড়া হাঁকেন ১৫, ২০ টাকা। একই অবস্থা গিরিশ পার্ক, কাঁকুড়গাছি রুটেও। এখানে গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে অটো মানিকতলা পর্যন্ত গিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়।
আর ভাড়া!
যাত্রীদের প্রশ্ন করলে, তাঁদের অসহায় উত্তর, পুজোর আগে অটোর ভাড়া নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। এমনিতে, পুজোর সময়ে সব রুটেই অটো ভাড়া এক থেকে দু’টাকা বাড়ানো হয়। সেই ভাড়া দেন যাত্রীরাও। কিন্তু বাড়তে বাড়তে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। গড়িয়া থেকে গোলপার্ক অটো ভাড়া ১৫ টাকা, যাদবপুর ৮ টাকা। কিন্তু এখন সন্ধ্যায় যাদবপুর থেকে গড়িয়া আসতে অটোচালকেরা ভাড়া হাঁকছেন ১৫-২০ টাকা।
কমিটির পরে কমিটি তৈরি হয়। তৈরি হয় নতুন নতুন নীতি। বিলি করা হয় নির্দেশিকাও। কিন্তু শহরের বুকে অটো-রাজ চলতে থাকে অবাধে। নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, পুজোর আগে শহরে ভিড় যানজটের পাশাপাশি অটোর-দাদাগিরিও প্রত্যেক বছরই বেড়ে যায়।
ক’দিন আগে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনও অটোচালক যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করলে, সংশ্লিষ্ট চালকের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। সেখানে ইউনিয়ন নাক গলাতে পারবে না। ওই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার সব থানাতেও।
কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, বাস্তবে অটোর দাদাগিরির চিত্রটা একেবারেই পাল্টায়নি।
যেমন, নাগেরবাজার-দমদম রুটের অটো চালকের একাংশের ঔদ্ধত্য ও অভদ্র আচরণে নাজেহাল যাত্রীরা। অভিযোগ, নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সামনে বসতে দেওয়া হয় না। মহিলা বা বয়স্কেরা ঠিক মতো অটোয় ওঠার আগেই চালক গাড়ি ছেড়ে দেন। প্রতিবাদ জানালে সাফ উত্তর, ‘না পোষালে নেমে যান।’ উল্টোডাঙা-লঞ্চঘাট রুটে কিংবা দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর-তারাতলা রুটে যাত্রীদের তটস্থ হয়ে থাকতে হয়, কখন কী হয়ে যাবে, আর অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবেন চালক।
এমন ছবি শুধু দমদম বা যাদবপুরের নয়। সারা কলকাতাতেই।
পুলিশের কাছে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছিল, ‘কাটা রুটে’ গাড়ি চালানো যাবে না।
কিন্তু বাস্তব চিত্র এ ক্ষেত্রেও এক্কেবারে উল্টো। কাটা রুটের দূরত্ব এখন কলকাতায় কমতে কমতে প্রায় এক কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে।
নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে গড়িয়া পর্যন্ত অটো কাটা রুটে চলাই দস্তুর। রুট ভেঙে রানিকুঠি-গাছতলা, বাঁশদ্রোণী এবং গড়িয়া হয়েছিল। এখন তার মধ্যেও ভাঙাভাঙি চলছে। টালিগঞ্জ মেট্রো থেকে রানিকুঠি আবার ভাগ হয়ে যাচ্ছে মালঞ্চে। দেড় কিলোমিটারের একটু বেশি দূরত্বে দু’টি রুট!
অটো চালকদের এ নিয়ে প্রশ্ন করলে, তাঁদের সাফ উত্তর, ইউনিয়নকে টাকা দিই। ‘দাদা’রা সব ‘ম্যানেজ’ করে রাখে। যেখানে খুশি বলতে পারেন, কিছুই হবে না।
অটো চালকেরা যে ‘ঠিক’, তা বোঝা যায়, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে অভিযোগ জানাতে গেলেই। রাস্তায় দাঁড়ানো ট্র্যাফিক পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করেন। পুলিশ-কর্তাদের কথায়, ‘‘অটো ভাড়া কী হবে, তা পরিবহণ দফতর ঠিক করে। আমাদের কিছু করার নেই। আর অটো চালকদের মাথার উপরে শাসক দলের ইউনিয়নের দাদারা আছেন। কিছু বলাই যাবে না।’’ আর পরিবহণ-কর্তাদের সাফাই, ‘‘বিধি আমরা তৈরি করি ঠিকই। কিন্তু তা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।’’
অতএব, নির্দেশই সার! অটো রাজ নিয়ন্ত্রণ তিমিরেই।