সকাল থেকেই জ্বরের রোগীরা লাইন দিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কেউ বসে আউটডোরের সিঁড়িতে। কেউ আবার ইমার্জেন্সির এক কোণে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে অপেক্ষা করছেন। আউটডোর, টিকিট কাউন্টার কিংবা ইমার্জেন্সি— সর্বত্রই রোগীদের লম্বা লাইন। এমনকী, জেলা হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে আসা আশঙ্কাজনক রোগীরও লাইন পেরিয়ে চিকিৎসা পাওয়ার উপায় নেই। আর এই অপেক্ষার জেরেই অনেক সময়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছিল। তখন জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় সামাল দিতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই তৈরি হয়েছিল ‘ফিভার ক্লিনিক’, যেখানে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ এবং নার্সরা থাকতেন। ওই সমস্ত ক্লিনিকে শুধুমাত্র জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসাই করা হত। কারও দেহে ডেঙ্গি পাওয়া গেলে তাঁর ঠিকানা-সহ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালগুলিকে। কিন্তু এ বছর সেই ক্লিনিক আর নেই। এমনকী, জ্বরের রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলিতে আলাদা কোনও লাইনও দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইডি হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েই মৃত্যু হয়েছে জ্বরে আক্রান্ত দু’জন রোগীর।
কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের যে নির্দিষ্ট ঘরগুলি ‘ফিভার ক্লিনিক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সেগুলি এ বছর মে়ডিসিন বিভাগের আউটডোরের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে জ্বরে আক্রান্তদের আলাদা ভাবে কোনও পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আউটডোরে অন্যান্য রোগীর সঙ্গেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদের।
এ বছর ফিভার ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোন এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ কতটা বাড়ছে, সেই সংক্রান্ত কোনও রিপোর্টও হাসপাতালের কাছে থাকছে না। কিন্তু, কোন এলাকার রোগী কী ধরনের সংক্রমণের জেরে জ্বরে ভুগছেন, তা আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে চিকিৎসা করতে আরও সুবিধা হয় বলেই মত চিকিৎসকদের। তাঁদেরই একাংশ জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আউটডোরে প্রতি দিন সাতশো থেকে আটশো জন রোগী আসছেন, যাঁদের মধ্যে আড়াই থেকে তিনশো জনই জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের আলাদা পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ থাকলে হাসপাতালের চাপও কমত বলে মনে করছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্তারা।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, কলকাতায় বেলেঘাটা আই়ডি ছাড়া অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ চাপ নেই। তাঁরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে জ্বরে আক্রান্তদের আইডি-তে ‘রেফার’ করা হচ্ছে। তাই বা়ড়তি রোগীর চাপ সামলাতে জরুরি বিভাগ ছাড়াও ওই হাসপাতালের চারটি ঘর জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালকর্মীদের এই চাপ সামলানোর জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, সেই বিশেষ ব্যবস্থা তাঁদের চোখে পড়েনি।
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, জেলা হাসপাতালগুলির ‘রেফার’-এর চাপেই কাবু হয়ে পড়ছে শহরের সরকারি হাসপাতাল। তাই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিভিন্ন ব্লকে পাঠিয়ে রোগ নির্ণয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতির উপরে নজরদারিরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার সদর হাসপাতালগুলিকে।