পাঁচ হাজারি ফতোয়া

সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের লাইনে ক্ষোভের আঁচ

পুরনো নোটে পাঁচ হাজারের বেশি টাকা জমা দেওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা তখনও ওঠেনি। বুধবার সকালে তখনও ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে লাইন। এবং নয়া ফরমানের জেরে ভোগান্তি। আর প্রতিক্রিয়া একটাই— ‘আর সইছে না’। গ্রাহক থেকে ব্যাঙ্ককর্মী, সকলের মধ্যেই চারিয়ে গেল সেই প্রতিবাদ।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দরজায়। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পুরনো নোটে পাঁচ হাজারের বেশি টাকা জমা দেওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা তখনও ওঠেনি। বুধবার সকালে তখনও ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে লাইন। এবং নয়া ফরমানের জেরে ভোগান্তি। আর প্রতিক্রিয়া একটাই— ‘আর সইছে না’। গ্রাহক থেকে ব্যাঙ্ককর্মী, সকলের মধ্যেই চারিয়ে গেল সেই প্রতিবাদ।

Advertisement

অ্যাডমিট কার্ড দেখাও

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির পরীক্ষা চলছিল পরপর। পড়াশোনার চাপ আর পরীক্ষা দিতে গিয়ে নোটের দিকে মন দিতে পারেননি পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা শুভম ত্রিপাঠী। বুধবার আর এন মুখার্জি রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় পুরনো নোটে হাজার দশেক টাকা জমা দিতে গিয়ে শুনলেন, এত দিন জমা না দেওয়ার কারণ লিখে ফর্ম ভরতে হবে। এখানেই শেষ নয়। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, তিনি যে সত্যি কথা বলছেন, তার প্রমাণও দাখিল করতে হবে। অগত্যা ফের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে, তার কপি জমা দিয়ে তবে টাকা জমা দিতে পেরেছেন শুভম।

Advertisement

কী করে পাশে থাকব?

পাঁচ হাজারের বেশি টাকা জমা দিতে না-পেরে অফিসপা়ড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেরিয়ে রীতিমতো বিরক্ত সোনারপুরের অন্তরা সাহা। বেসরকারি কর্মী অন্তরার অভিযোগ, কাজের চাপে মাথা তোলার সময় নেই। ব্যাঙ্কে লাইন দেওয়ার সময় করে উঠতে পারেননি এত দিন। ভেবেছিলেন প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটলে জমা দেবেন। সময় তো আছে! ‘‘এ ভাবে মানুষকে আতান্তরে ফেললে কী করে পাশে থাকবে মানুষ?’’— প্রশ্ন ক্ষুব্ধ অন্তরার।

আর পারছি না

বেহালা চৌরাস্তার সুস্মিত বসু স্পষ্ট বলছেন, ‘‘বেশ করেছি, জমা দিইনি এত দিন। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা সরকারকে দিতে হবে, ভাবতেও পারিনি।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করলে না হয় বুঝতাম, সে জন্য ভুগছি। সব কথা মেনেছি, দিনের পর দিন এটিএমে লাইন দিয়েছি, টানাটানিতে সংসার চালিয়েছি, দু’হাজারি নোট নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরেছি। আর এখন বলছে পুরনো নোটও মেপে জমা দিতে হবে? আর সহ্য হচ্ছে না।’’ সুস্মিতের কথারই প্রতিধ্বনি ব্যাঙ্কের গোটা লাইনেই। বেশির ভাগেরই দেরি নানা কারণে। কেউ বা নিছকই অপেক্ষা করেছেন। কেউই ভাবেননি, সরকারি ঘোষণা এ ভাবে হঠাৎ বদলাতে পারে!

হাত-পা বাঁধা

আর এন মুখার্জি রোডের ওই ব্যাঙ্কেরই ম্যানেজার সুপর্ণা ভট্টাচার্য জানান, ব্যাঙ্কের উপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই। নভেম্বরের ন’তারিখ থেকে ব্যাঙ্ককর্মীরা ঘাড় গুঁজে কাজ করে চলেছেন। সুপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘পাঁচ হাজারের বেশি টাকা জমা নিতে গেলেই হাজার রকমের উত্তর দিতে হচ্ছে উপরমহলে। অথচ গ্রাহকদের অবস্থাটাও বুঝতে পারছি।’’ আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্টিফেন হাউস শাখার এক কর্তা অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পরপর নতুন নতুন নির্দেশ এলে মেনে চলা আমাদের পক্ষে মুশকিল।

তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই একসঙ্গে বেশি টাকা নিয়ে বেরোবেন না বলে পরে জমা করবেন ভেবেছেন। তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেকের সঙ্গে। অথচ আমাদেরও হাত-পা বাঁধা।’’ আবার গ্রাহকদের এত দিন টাকা জমা না-দেওয়ার যুক্তি হিসেবে কী কী গ্রাহ্য হবে বা হবে না— তার কোনও নীতি বেঁধে দেয়নি সরকার।

‘‘বুঝেই উঠতে পারছি না, কার যুক্তি বিশ্বাস করব বা কারটা করব না। ভয়ে সর্বক্ষণ কাঁটা হয়ে আছি, পাছে কোনও ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়।’’— বললেন সুপর্ণাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন