ফুটব্রিজ এড়িয়ে লাইন দিয়ে যাতায়াতই নিয়ম বিধাননগরে

বিধাননগর রোড স্টেশনের এই দৃশ্য নিত্যদিনের। কখনও দু’দিক দিয়ে একইসঙ্গে ট্রেন ঢুকছে স্টেশনে। কখনও এক্সপ্রেস ট্রেন দ্রুত গতিতে পেরিয়ে যাচ্ছে স্টেশন। হঠাৎ করে ট্রেন চলে আসায় নিত্যযাত্রীরা কোনও ভাবে রেল লাইন থেকে লাফ দিয়ে সরে যাচ্ছেন। তবু ফুটব্রিজ ব্যবহারে তীব্র অনীহা তাঁদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪৬
Share:

ঝুঁকি: প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে ট্রেন। তা-ও যাতায়াত রেললাইন পেরিয়ে। ছবি: শৌভিক দে

আপ ও ডাউন দু’দিক থেকেই ট্রেন ঢুকছে। দুই লাইনের মাঝে তখন প্রায় কয়েকশো নিত্যযাত্রী। পড়িমরি করে কোনও মতে লাফিয়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়লেন তাঁরা।

Advertisement

বিধাননগর রোড স্টেশনের এই দৃশ্য নিত্যদিনের। কখনও দু’দিক দিয়ে একইসঙ্গে ট্রেন ঢুকছে স্টেশনে। কখনও এক্সপ্রেস ট্রেন দ্রুত গতিতে পেরিয়ে যাচ্ছে স্টেশন। হঠাৎ করে ট্রেন চলে আসায় নিত্যযাত্রীরা কোনও ভাবে রেল লাইন থেকে লাফ দিয়ে সরে যাচ্ছেন। তবু ফুটব্রিজ ব্যবহারে তীব্র অনীহা তাঁদের।

ওই স্টেশনে কর্মরত জিআরপি-এর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, রেল লাইন পারাপার না করে ফুটব্রিজ ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালিয়েও বিশেষ কাজ হয় না। জিআরপি-র এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখানে সাঁতরাগাছির মতো ফুটব্রিজে নয়, দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে রেললাইনের উপরে। লাইন পারাপার করতে গিয়ে এক সঙ্গে অনেক মানুষের ট্রেনে কাটা পড়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।’’ শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘লাইন দিয়ে যেন কেউ যাতায়াত না করেন, সে ব্যাপারে সচেতন করতে কয়েকটা বোর্ড ঝুলিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে রেল কর্মীদের দিয়ে ঘোষণাও করাই। রেল দফতরকেও যাত্রীদের সচেতন করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে।’’

Advertisement

বিধাননগর, উল্টোডাঙা এলাকার নিত্যযাত্রীরাই শুধু নন, এই স্টেশন ব্যবহার করেন সেক্টর ফাইভ, নিউ টাউনের অফিসযাত্রী, বিধাননগরের আশেপাশের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও। জিআরপি সূত্রের খবর, প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত লক্ষ নিত্যযাত্রী এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। ক্রমশ এই যাত্রী সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্টেশনের পরিকাঠামোর তেমন উন্নতি হয়নি।

বিধাননগর স্টেশন ব্যবহার করেন এমন নিত্যযাত্রীদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই ট্রেন আসার ঘোষণা হওয়ার পরেও অনেকে প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার বদলে ফুটব্রিজেই দাঁড়িয়ে থাকেন। ফলে সংকীর্ণ ফুটব্রিজের ভিড় এড়িয়ে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে নিত্যযাত্রীরা বাধ্য হন রেললাইন পারাপার করতে। এক নিত্যযাত্রী অরূপ বসুর কথায়, ‘‘বিধাননগর রোড স্টেশনে যে ভাবে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে আরও একটা ফুটব্রিজ করা খুবই জরুরি। তা হলেই ফুটব্রিজে ভিড় কমবে। মানুষের পায়ে হেঁটে রেললাইন পারপার করার অভ্যাসও পাল্টাবে।’’

যদিও জিআরপি আধিকারিকদের মতে, ফুটব্রিজে ভিড় থাকার জন্য নয়, নিত্যযাত্রীরা সময় বাঁচানোর জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পেরোন। কর্মরত জিআরপি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, স্টেশনের পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ জরুরি ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে মানুষের অভ্যাসের বদলটাও জরুরি। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে অথবা ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হওয়ার সময়ে একাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর পর থেকেই পুরো স্টেশন জুড়ে বেড়েছে নজরদারি। এমন যাত্রীদের ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবুও বেশির ভাগ নিত্যযাত্রীর হুঁশ ফিরছে না। এমনকি, তাঁদের সচেতন করার জন্য প্লাটফর্মের আশপাশে যে সব বোর্ড লাগানো হয়েছিল সেগুলি কেউ বা কারা ভেঙে ফেলেছে বলে জিআরপি-র অভিযোগ। ফলে ট্রেনে ধাক্কা লেগে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না।

পরিকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে অল্প রেল পুলিশকর্মীর সংখ্যাও বিধাননগর রোড স্টেশনের আরও এক সমস্যা। এই স্টেশনে কর্মরত জিআরপি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘এখানে জিআরপির কর্মী সংখ্যা ১০ জনের মতো। এ ছাড়া ১৫ জন মতো সিভিক পুলিশও কাজ করছেন। তবে এই স্টেশন দিয়ে সারাদিনে প্রচুর লোকাল ট্রেন ও এক্সপ্রেস ট্রেন যাতাযাত করে। এই অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে দৈনিক পাঁচ থেকে সাত লক্ষ নিত্যযাত্রী ও এত সংখ্যক ট্রেন সামলানো খুবই কঠিন।’’

সাঁতরাগাছির দুর্ঘটনার পরে বিধাননগর রোড স্টেশন নিয়ে কি কিছু ভাবছে রেল? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলছেন, ‘‘সাঁতরাগাছির দুর্ঘটনার পরে শুধু বিধাননগর রোড স্টেশনই নয়, শহরতলির সমস্ত স্টেশনের পরিকাঠামোর কোথায় খামতি আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন