Bengali New Year

নতুন বছরে দেখি আস্থা, বিশ্বাস আর নিরপেক্ষতার স্বপ্ন

শহরের কোথাও নেই জঞ্জালের স্তূপ, নেই খোলা নর্দমা, বৃষ্টিতে কোনও শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয় না। প্রতিটি শহরে কত গাছ, গরম কমেছে, দূষণ খুব কম। ক্যানসার বা ফুসফুসের অসুখ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

Advertisement

তিলোত্তমা মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৯
Share:

নতুন বছরে, নতুন স্বপ্ন। প্রতীকী ছবি।

চওড়া ঝকঝকে রাস্তা, দু’ধারে সবুজ গাছের সারি, গাছে গাছে কত যে পাখি, তার গোনাগুনতি নেই। সমস্ত পুকুরের চার দিক বাঁধানো, পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ জল টলটল করছে। পুবের হাওয়া নিজেকে ওই জলে স্নান করিয়ে শীতল হয়ে বয়ে যাচ্ছে পশ্চিমে। দখিনা বায়ু জলে হিল্লোল তুলে মেঘের সঙ্গে ভাব-ভালবাসা করতে ছুটল। যত দূর চোখ যায়, ফসলে ভরা শ্যামল খেত। কিংবা আদিগন্ত বিস্তৃত ফুলের চাষ। গ্রামগুলি কী স্নিগ্ধ, শান্ত আর নিরাপদ। কোথাও হানাহানি নেই। কেউ লুকিয়ে বোমা-বন্দুক বানায় না। একে অন্যের ঈশ্বরকে আক্রমণ করে না। কোথাও জলাভাব নেই। পর্যাপ্ত খাদ্যভান্ডার। খেতে জলসেচের কী চমৎকার ব্যবস্থা। সব নদনদীর নাব্যতা গভীর। তাই বন্যা হচ্ছে না কোথাও। ঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই, সকলকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ ভবনে। ক্ষতিগ্রস্তেরা পেয়ে যায় তাৎক্ষণিক সহায়তা। কারচুপি নেই। প্রতারণা নেই। শুধু সৌন্দর্য, শান্তি, ভালবাসা আর সহযোগিতা।

Advertisement

এক জন ভিখারিও নেই কোথাও। না গ্রামে, না শহরে। বেকারের সংখ্যা অর্ধেক কমে গিয়েছে। বাকি অর্ধেকের জন্য আংশিক সময়ের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ন্যূনতম জ্ঞান হিসাবে প্রত্যেক কর্মী অল্পবিস্তর কম্পিউটার জানে। কৃষিক্ষেত্রে যেমন ফসল উপচে পড়ছে, তেমনই নানা শহরে গড়ে উঠছে কলকারখানা। সেগুলি আবার পরিবেশ-সচেতন। কিছু শ্রমনিবিড়, কিছু মেধাভিত্তিক।

শহরের কোথাও নেই জঞ্জালের স্তূপ, নেই খোলা নর্দমা, বৃষ্টিতে কোনও শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয় না। প্রতিটি শহরে কত গাছ, গরম কমেছে, দূষণ খুব কম। তাই ক্যানসার বা ফুসফুসের অসুখ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কোথাও দৃশ্যদূষণও নেই। আনাচ-কানাচে শুধু ফুল ফুটে থাকে। সেই সব উদ্যানের দেখাশোনায় বহু নিয়োগ হয়েছে। ফুটপাত থেকে হকার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সুপরিকল্পিত বাজার গড়ে উঠেছে সব শহরে। নর্দমার উপরে পিঁড়ি পেতে মাছ-মাংস কেটে বিক্রি করার দিন চলে গিয়েছে। আনাজে নেই ক্ষতিকারক রং, পোকা মারার ওষুধের রেশ, শনপাপড়িতে নেই সংরক্ষণের দাওয়াই। রসগোল্লা বা ঘি, ওষুধ অথবা বেবিফুড— কোনও কিছুতেই আর ভেজাল মেশে না।

Advertisement

হাসপাতালগুলি কী চমৎকার দয়ালু! সরকারি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা, ব্যবস্থা ও কর্মীদের সততা প্রশ্নাতীত। বেসরকারি হাসপাতাল অকারণে রোগীর নামে আকাশছোঁয়া বিল তোলে না। জিনিসের দাম, হাসপাতালের হিসাব, স্কুলে বাচ্চাদের খাবারের মান, অবসরগ্রস্তদের সময়ানুগ পেনশন, কর্মীদের বকেয়াবিহীন বেতন— সরকার নিখুঁত ভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করে।

গৃহহারা অথবা অন্য কোনও প্রদেশ থেকে আসা দরিদ্র ভাগ্যান্বেষী পরিবার আর পথের ধারে, মাঠে ঝুপড়ি বাঁধে না। সরকার ও সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায়ের সহায় হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থা লভ্যাংশ থেকে অনুদান দিচ্ছে রাজ্যের উন্নতির জন্য, দেশের অগ্রসরমানতার জন্য।

রাস্তায় দু’পা চলতেই ছেঁড়া কাপড়ে শায়িত অপুষ্ট, রোগজর্জর শিশু আর একটিও নেই। সব শিশু পুষ্টিকর খাবার, আশ্রয় ও নিরাপত্তা পায়। ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি হিতব্রতী। শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়, পেশামুখী শিক্ষাও নয়, সৃজনশীল, সৌভদ্র, সচেতন নাগরিক তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য। কারণ, তারাই জাতির ভবিষ্যৎ।

বেসরকারি হাসপাতালের মতো, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও সুনিয়ন্ত্রিত। কোথাও অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী নেই। কোথাও চাকরিতে কারচুপি করে নিয়োগ হয় না। সব স্কুলে বাংলা ভাষা শেখানো হয়। প্রত্যেকটি কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে পড়ানো হয় বাংলা কাব্য সাহিত্য এবং ভারতের প্রকৃত ইতিহাস।

ব্যবসায়ী হোক বা পেশাদার, চাকরিজীবী হোক বা গৃহশিক্ষক, কেউ কর ফাঁকি দেয় না। কেউ বিদ্যুৎ চুরি করে না। কেউ ঘুষ খায় না।

রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সহিষ্ণু। প্রতিবাদ আছে, থাকবে। কিন্তু মিছিল এসে জনজীবন রুদ্ধ করে না। বিধানসভায় শাসকদল বিরোধীদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে শোনে। সৃজনশীল ব্যক্তিরা স্বাধীন ভাবে কাজ করে। জনগণ খোলাখুলি মতামত প্রকাশ করতে পারে। সমাজে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে বিশ্বাস বেড়েছে, আস্থা বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় কেউ হাত দেয় না। সততা বা নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে না।

সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা, মেধা, নেতৃত্ব, ঐতিহ্যশালী পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে এই স্বপ্ন দেখাই কি স্বাভাবিক নয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন