যানজট, বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমজমাট চতুর্থী

বিকেলেই মহাত্মা গাঁধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে গাড়ির লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি গঙ্গার পশ্চিম পারে যেতেই পারছিল না। ধর্মতলা চত্বরেও নড়ছিল না গাড়ির চাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪০
Share:

তালে তালে: পুজোর শহরে এসে পৌঁছলেন ঢাকিরা। শনিবার, শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ

চতুর্থীর দুপুরে মোটরবাইকে চেপে সিঁথির মো়ড় পেরিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের বিমল সেনগুপ্ত। ধর্মতলায় যখন পৌঁছলেন, তত ক্ষণে বিকেল গড়িয়েছে! ঘড়ি ধরে বিমলবাবু দেখেছেন, টালা ব্রিজ থেকে নামার পরে ধর্মতলা পৌঁছতে তাঁর লেগেছে প্রায় দু’ঘণ্টা! চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে মারাত্মক যানজটকেই দুষছেন তিনি।

Advertisement

বিকেলেই মহাত্মা গাঁধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে গাড়ির লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি গঙ্গার পশ্চিম পারে যেতেই পারছিল না। ধর্মতলা চত্বরেও নড়ছিল না গাড়ির চাকা। রাসবিহারী অ্যাভিনিউতেও যানজটে ভুগেছেন মানুষজন। দিনভর কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ফেসবুক পেজেও যানজটের কথা জানিয়েছেন আম-নাগরিকেরা। মাঝেরহাট সেতুর বিকল্প হিসেবে বেইলি ব্রিজ চালু করেও নিউ আলিপুর, বেহালার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল ন’টা পর্যন্ত যানজটে আটকে ছিল বন্দর এলাকার একাধিক রাস্তা এবং বিদ্যাসাগর সেতু। পরিস্থিতি সামলাতে ভোরে ডিসি পদমর্যাদার দুই অফিসারকে সেখানে ছুটে যেতে হয়। শনিবার রাতেও ভিআইপি রোড-সহ উল্টোডাঙা, ই এম বাইপাস এবং বেহালার রায়বাহাদুর রোড, হরিদেবপুরের মহাত্মা গাঁধী রোডে যানজটে ভুগেছেন মানুষ।

পুজো ময়দানের স্কোরবোর্ড বলছে, চতুর্থীর দিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত যানজটের কাছে গোল খেয়েছে পুলিশ! পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন, সন্ধ্যার পরে রাসবিহারী-সহ দক্ষিণ কলকাতার একাংশে যানচলাচল পরিস্থিতি মোটের উপরে স্বাভাবিক করা হয়েছিল। রাত আটটার পরে শহরের অনেক রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

পুলিশের একাংশের দাবি, বিদায়ী নিম্নচাপের জেরে শুক্রবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তবে বন্দরে যানজটের জন্য দায়ী জৈনকুঞ্জের কাছে পণ্যবাহী গাড়ি খারাপ হওয়া। এ দিন দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে গাড়ির গতি ঢিমে হয়েছিল। পুজোর ছুটির আগে এটাই ছিল কার্যত কাজের শেষ দিন। ফলে গা়ড়িঘোড়া, কেনাকাটার ভি়ড় ছিল। তাতেই ঘেঁটে গিয়েছে হাতিবাগান, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা-সহ বিভিন্ন রাস্তা। লেক টাউনে শ্রীভূমির ভিড় এ দিনও ভুগিয়েছে। বেহাল দশা সল্টলেক ও ভিআইপি রোডের সংযোগকারী ফুটব্রিজে মানুষের যাতায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ।

বিকেলের পরে আকাশের মুখভার কমতেই পথে নামে জনতা। ব়়ড়িশা ক্লাব, বেহালা নূতন দল, বেহালা ক্লাবে লোকের ভি়ড় জমেছে। বড়িশা ক্লাবের পুজোকর্তা অনিমেষ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বয়স্ক মানুষেরাই বেশি ভিড় করছেন। আমাদের থিমের সঙ্গে তাঁরা নিজেদের জুড়ে নিচ্ছেন।’’ নূতন দল, ২৯ পল্লির মণ্ডপও তারিফ কুড়িয়েছে। ওই এলাকায় দর্শকদের নজর কে়ড়েছে বেহালা ক্লাব, নতুন সঙ্ঘের প্রতিমা। গড়িয়ার মিতালি সঙ্ঘে এ বার লোকের আকর্ষণ বাড়িয়েছে মণ্ডপ চত্বরে সাঁওতালি মাদল ও নৃত্য। সন্ধ্যায় মাদলের ‘দ্রিমি দ্রিমি’ আওয়াজ শুনতে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন সেখানে। হরিদেবপুরের অজেয় সংহতি, ৪১ পল্লিতেও লোকের আনাগোনা বেড়েছে। ভবানীপুর অবসর, কালীঘাটের সঙ্ঘশ্রীর প্রতিমাও কিন্তু লোকের মুখে তারিফ কুড়িয়েছে। কালীঘাট মেট্রোতে নেমে অনেকেই হাঁটা দিয়েছেন ৬৬ পল্লি, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের দিকে।

এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাক লাগিয়েছে উল্টোডাঙার শুঁড়িরবাগান ও টালার সরকারবাগান সম্মিলিত সঙ্ঘ। শুঁড়িরবাগানের মণ্ডপের ফিতে কেটেছেন ১০০ দিনের প্রকল্পে জড়িত পুরসভার সাফাইকর্মীরা। সরকারবাগানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ‘ফেসবুক লাইভ’ হয়েছে। টালা বারোয়ারির ‘মা’ থিম লোকের উৎসাহ বাড়িয়েছে।

হাতিবাগানের নবীনপল্লি এ বার বাংলার বই ও লাইব্রেরিকে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। সেই মণ্ডপ দর্শকের নজর কা়ড়ছে। নলিন সরকার স্ট্রিটের দেওয়ালে ‘গ্রাফিতি’ দেখতেও ভিড় জমেছে। ভিড় বা়ড়ছে কাশী বোস লেনের ‘বারান্দা’য়।

উল্টোডাঙা থেকে আসা ভিড়টা তেলেঙ্গাবাগান, করবাগান, শুঁড়িরবাগান হয়ে গৌরীবেড়িয়ার মণ্ডপেও ঢুকেছে। সেখানে এ বার শিল্পী মজুমদার দম্পতি সুমি ও শুভদীপ। এ দিনই আমজনতার জন্য খুলে গিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে রথের দরজা!

আশার কথা, বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে নিম্নচাপের রূপ নেওয়া ‘বৃষ্টি-অসুর’। আজ, রবিবার পঞ্চমী। শুকনো মাঠে উৎসব কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ছন্দে ফিরবে কি পুলিশ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন