Bhai dooj

ভাইফোঁটার থালা সাজাতে বাজারেই হাত পুড়ছে জনতার

পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে ভাইয়ের থালা সাজানোর আগেই হাত পুড়ছে দিদির! কেউ ভাইফোঁটার মেনুতে কাঁটছাট করছেন, কেউ বাধ্য হচ্ছেন বরাদ্দ বাড়াতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১২
Share:

শীতের আনাজ উঠলেও কমেনি দাম। আনাজের পসরা সাজিয়ে এক বিক্রেতা। রবিবার, যদুবাবুর বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভেবে বেরোলেন এক, শেষে হল আর এক। উৎসবের মরসুমে মধ্যবিত্ত বাঙালির এমনটাই হয়। ইচ্ছে ষোলো আনা থাকলেও পকেট সঙ্গ দেয় না। উৎসবের শেষ প্রহরে এই টানাটানির অবস্থা প্রতিবার আরও বাড়িয়ে দেয় ভাইফোঁটার থালা সাজানোর চিন্তা। এ বারও আনাজ, ফল, মাছ-মাংসের দাম শুনেই মুখ ফ্যাকাসে থলে হাতে বেরোনো মধ্যবিত্তের।

Advertisement

পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে ভাইয়ের থালা সাজানোর আগেই হাত পুড়ছে দিদির! কেউ ভাইফোঁটার মেনুতে কাঁটছাট করছেন, কেউ বাধ্য হচ্ছেন বরাদ্দ বাড়াতে। মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট— সর্বত্র একই ছবি। শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। বাজারে হাজির শীতের রকমারি আনাজপাতি। তবুও গত কয়েক দিন ধরে প্রায় সব জিনিসের দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সে অভিযোগ মেনেও নিচ্ছেন বিক্রেতাদের একাংশ। তবে তাঁরা আঙুল তুলছেন পাইকারি বাজারের দিকে।

রবিবার শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে খানিকটা আন্দাজ করা গেল দামের সেই ছেঁকার মাত্রা। কয়েক দিন আগে যে আপেল ২০০ টাকা ছিল, এ দিন সেটাই বিকোচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে। পেয়ারা এবং শসার দর ছিল কেজি প্রতি ১০০ এবং ৭০ টাকা। এমনকি, বাজারে সদ্য মাথা তোলা কমলালেবুর দরও চড়া। কেজি প্রতি কড়াইশুঁটি তো ২০০ থেকে এক লাফে ২৫০-এর ঘরে ঢুকে গিয়েছে। সামান্য বড় চেহারার ফুলকপি হলে একটির দামই ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা কেজি, বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, পটল-ঢেঁড়স ৮০ টাকা করে কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সুযোগ বুঝে বেশি দর হাঁকারও অভিযোগ তুলছেন কেউ কেউ। ভাইফোঁটার দু’দিন আগেও আনাজ কিনতে গিয়ে স্বস্তি পেলেন না ক্রেতারা। কাঁকুড়গাছি বাজারের আনাজ ব্যবসায়ী মাধব সেনের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে তো কিছু করার নেই। তা ছাড়া কালীপুজো আর ভাইফোঁটায় একটু দাম বাড়েই। উৎসবের এটাই তো শেষ।’’

Advertisement

মাছ, মাংস, ফিশফ্রাই, স্যালাড— সবেতেই অপরিহার্য পেঁয়াজ, এ দিন তার দাম ছিল এক কেজি ৭০ টাকা। প্রকারভেদে মাছের দাম এক এক রকম। পাবদা, ভেটকি, পমফ্রেট ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। জ্যান্ত দেশি ট্যাংরা ৭০০ টাকা কেজি, গোটা কাতলার কেজি ৩০০ টাকা। গলদা চিংড়ির কেজি ৮০০ টাকা। বাজার থেকে প্রায় উবে গিয়েছে ইলিশ। দু’-একটি বাজারে যা-ও বা তার দেখা মিলল, কিন্তু দাম শুনে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসা ক্রেতা হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন। এক কেজির দাম ১৫০০ টাকা! অন্য দিকে, খাসির মাংসের কেজি ৮০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোনও কোনও বাজারে এ দিন ৮২০-৮৩০ টাকাও ছিল দর। নামে যতই বিদ্রুপ মিশুক, এখনও স্বস্তি দিচ্ছে মুরগির মাংস। কেজি প্রতি ২৫০ টাকা দরে ভাইফোঁটার থালা সাজানোর অনেকটাই দায়িত্ব তার।

মানিকতলা বাজারের এ মাথা থেকে ও মাথা চষে বেড়াচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। হাতের তালিকা দেখিয়ে বললেন, ‘‘যা যা লেখা আছে, তার কোনওটাই বাজেটে হচ্ছে না। জানি না কোন মুখে বাড়ি ঢুকব। আনন্দ করে যে একটু খাব, উপায় নেই। দাম শুনেই তো গলায় কাঁটা বিঁধছে, মাছ খাব কী!’’

‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের যুক্তি, ‘‘প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজো থেকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত জিনিসের দাম বেশিই থাকে। এ বছরও সেটাই হয়েছে। তবে কয়েকটি বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও সুযোগ নিচ্ছেন। টাস্ক ফোর্সের তরফে বিভিন্ন বাজারে ঘুরছি। আশা করছি, কয়েক দিনে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন