উল্টোডাঙা

পথ আটকে ‘নিউ ইয়ার’, দুর্ভোগ

বুধবার বিকেল পৌনে সাতটা। সল্টলেক থেকে পিএনবি হয়ে বেরোতেই দাঁড়িয়ে গেল বাস। গেল তো গেলই। আর নড়ে না। কানে আসছে চটুল গান। ব্যাপারটা কী?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share:

থমকে পথ। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে।

বুধবার বিকেল পৌনে সাতটা। সল্টলেক থেকে পিএনবি হয়ে বেরোতেই দাঁড়িয়ে গেল বাস। গেল তো গেলই। আর নড়ে না। কানে আসছে চটুল গান।

Advertisement

ব্যাপারটা কী?

বাস থেকে অগত্যা নেমে একটু এগোতেই দেখা গেল, উল্টোডাঙা মোড়ে পশ্চিম দিকের ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দখল করে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। তার সামনে রাস্তার উপরেই চেয়ার পাতা। তখনও ভিড় হয়নি। কিন্তু যে ভাবে রাস্তা বন্ধ করে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তার জেরেই ভর সন্ধ্যায় যানজটের এই ধাক্কা। আর একটু এগোতেই জানা গেল, দক্ষিণে যানজট গিয়েছে কাঁকুড়গাছি পর্যন্ত। পশ্চিমে তা ছাড়িয়েছে মুচিবাজার এবং ভিআইপি রোডের দিকে গোলাঘাটা পর্যন্ত।

Advertisement

চার-চারটি অটো রুট ওই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া-আসার সব বাসও ঘোরে ওই মোড় দিয়ে। কাজেই সন্ধ্যার মুখে জট পাকিয়ে গিয়েছে গোটা এলাকার যানচলাচল।

সন্ধ্যার পরপরই শুরু হল অনুষ্ঠান। মাইকে জোর শব্দ এবং যানজটে আটকে থাকা গাড়ির পরিত্রাহী হর্ন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় বাস, অটোয় আটকে থাকা মানুষের।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হল। বাড়ল যানবাহনের চাপও। মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ারগুলি ভরতে লাগল একটু একটু করে। আর পুলিশ শ্রোতাদের নিরাপত্তায় রাস্তা আরও ছোট করে দিল। গোটা এলাকায় তখন বাস, ট্যাক্সি, মিনিবাসে জট পাকিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলল ট্রাম। ১০ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লাগল প্রায় এক ঘণ্টা।

রাস্তা দখল মুক্ত করে যানবাহন সামলানোর ভার যাদের, সেই পুলিশকে দেখা গেল ছোটাছুটি করে সামাল দিচ্ছে ট্র্যাফিক। কিন্তু উৎসব মঞ্চ ভাঙার কোনও তাগিদ নেই তাদের।

গত রবিবার থেকে এই দুর্ভোগ চলছে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, মঞ্চ থাকবে আগামী রবিবার রাত পর্যন্ত। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে সোমবার শুরু হবে মঞ্চ খোলার কাজ। রাস্তা আটকে এমন মঞ্চ কে বানাল যে পুলিশ তা ভাঙতে সাহস পাচ্ছে না?

মঞ্চের পিছনের পর্দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যোর ছবি। ছবি রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডেরও। অনুষ্ঠান হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডুর সৌজন্যে। নেতা-মন্ত্রী যেখানে উদ্যোক্তা, পর্দায় যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, সেখানে যতই মানুষের দুর্ভোগ হোক বড়দিন আর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বন্ধ হবে কী করে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন পথ চলতি অনেকেই।

কী বলছেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে? তাঁর দাবি, ‘‘রাস্তা আটকে কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না। রাস্তার এক দিক গাড়ি যাতায়তের জন্য খালি রাখা হয়েছে।’’

আরও এক ধাপ এগিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘সকলে মিলে আনন্দ করার জন্য এই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। তবে এর জন্য কোনও যানজট বা সমস্যা হচ্ছে না।’’ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিরক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর বলেছেন, ‘‘আপনারা ভাল কাজের প্রশংসা না করে খারাপ দিকে এত প্রচার করেন কেন? পাশেই আমরা বিধান শিশু উদ্যানে ফোয়ারা তৈরি করেছি। এ বিষয়ে লিখুন।’’

রাস্তা আটকে এই অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়েছেন কি অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা? প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন শান্তিবাবু। অঞ্চলটি মানিকতলা থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। মানিকতলা থানার আধিকারিক বলেন, ‘‘এবিষয়ে কিছু জানি না। যা বলার ট্র্যাফিক বলবে।’’

ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে একাধিক বার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বেজেই গিয়েছে। এসএমএসের জবাবও দেননি তিনি। তাঁর অফিস থেকে বলা হয়, ‘‘সাহেব ছুটিতে গিয়েছেন।’’ কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানটি নিয়ম মেনে হচ্ছিল কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন