জঞ্জাল থেকে কান্নার শব্দ, উদ্ধার শিশু

শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরে। উদ্ধারের পরে শিশুটিকে প্রথমে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তার পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:১২
Share:

আর জি কর হাসপাতালে সেই শিশু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

জঞ্জালের স্তূপ থেকে ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। যা শুনে স্থানীয় কয়েক জন গিয়ে দেখেন, রক্ত মাখা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে রয়েছে ছোট্ট দু’টি পা। ব্যাগটি তুলে এনে খুলতেই দেখা যায়, ভিতরে রয়েছে সদ্যোজাত এক পুত্র।

Advertisement

শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরে। উদ্ধারের পরে শিশুটিকে প্রথমে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তার পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে ‘নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু)-এ ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাহনগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এ কে মুখার্জি রোড এলাকায় একটি গলিতে রাস্তার ধারেই বসে মাছের দোকান। তার পিছনে রয়েছে একটি ফাঁকা জায়গা। সেখানে আবর্জনা পড়ে থাকে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সেখান থেকেই ক্ষীণ গলার কান্নার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদেরই কয়েক জন সেখানে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগটি তুলে আনার পরে দেখা যায়, ভিতরে রয়েছে একটি ফুটফুটে শিশু। তার মাথা থেকে পেট পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতরে ছিল। ব্যাগের হাতল দু’টি শক্ত করে বাঁধা ছিল। যে কারণে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছিল না শিশুটি।

Advertisement

শিশুটিকে উদ্ধারের পরে স্থানীয় বাসিন্দা রতন কর নিজের অটোয় চাপিয়ে তাকে নিয়ে যান বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানকার সুপার জয়ব্রতী মুখোপাধ্যায় জানান, শিশুটিকে দেখার পরে তাঁদের ধারণা হয়, ঘণ্টা ছ’য়েক আগে সে জন্মেছে। প্রথমেই শিশুটির সারা গায়ে লেগে থাকা রক্ত ভাল করে পরিষ্কার করা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, তার কিছুটা হলেও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। এর জন্য অক্সিজেন দেওয়া হয় শিশুটিকে। তার শরীরে অনেক আঁচড়ের চিহ্ন ছিল। জয়ব্রতী বলেন, ‘‘সম্ভবত বাড়িতেই প্রসব করানো হয়েছে। কারণ, নাড়ি খুবই অনভিজ্ঞ হাতে কাটা হয়েছে। ছুড়ে ফেলায় শিশুটির মাথায় চোট লেগে থাকতে পারে। তাই সিটি স্ক্যান দরকার। নিকু-তে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে বলেই তাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।’’

খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর অঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ‘‘কে বা কারা এই অমানবিক কাজ করলেন, বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশের পাশাপাশি আমরাও খোঁজ নিচ্ছি। তবে শিশুটিকে আগে সুস্থ করাই মূল লক্ষ্য।’’ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সে করেই রতনবাবুরা শিশুটিকে আর জি করে নিয়ে যান। রতনবাবু বলেন, ‘‘বাচ্চাটিকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। গলায় আঙুলের ছাপও রয়েছে। এইটুকু দুধের শিশুকে যে বা যাঁরা এই কষ্ট দিলেন, তাঁদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন