Duttapukur Blast

গ্রাম জুড়ে শ্মশানের স্তব্ধতা, ‘শাসক-বিরোধী পাশে কেউ নেই’, ক্ষোভ মোচপালে

দত্তপুকুর থানার মোচপোলের পশ্চিমপাড়ায় বৃহস্পতিবারের ছবিটা ছিল এমনই। থমথমে পরিবেশ। বিস্ফোরণস্থলের অদূরে বসে কয়েক জন পুলিশকর্মী। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা পলিথিনের ফিতে ছিঁড়ে মাটিতে লুটোচ্ছে।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়, ঋষি চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:১৬
Share:

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির সামনে আহত বাসিন্দা সফিকুল আলি। বৃহস্পতিবার, মোচপোলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

গ্রাম জুড়ে শ্মশানের স্তব্ধতা।

Advertisement

একটা আস্ত পাড়া যেন মুখ থুবড়ে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভেঙে পড়েরয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ধ্বংসস্তূপে বদলে যাওয়া বাড়িতে ঢুকে কোরান খুঁজছেন বছর পঁচিশের এক যুবক। উল্টো দিকে বিস্ফোরণে চৌচির হওয়া নিজের বাড়ির দিকে ছলছল চোখে চেয়ে এক বধূ। অদূরে একটি বাড়ির রকে বসে জোগাড়ের কাজ করা মফিজুদ্দিন আলিহতাশ গলায় আউড়ে উঠলেন, ‘‘কেউ কথা রাখে না। সবাই এসে ভাষণ দিয়ে, ছবি তুলে চলে গেল। আজ চার দিন হল আর কারও দেখা নেই। আমরা কী ভাবে আছি, কী খাচ্ছি, এর পরে কী হবে, এ সব নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।’’

দত্তপুকুর থানার মোচপোলের পশ্চিমপাড়ায় বৃহস্পতিবারের ছবিটা ছিল এমনই। থমথমে পরিবেশ। বিস্ফোরণস্থলের অদূরে বসে কয়েক জন পুলিশকর্মী। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা পলিথিনের ফিতে ছিঁড়ে মাটিতে লুটোচ্ছে। ফলে যেপারছে, ঢুকে পড়ছে সেখানে। দূর-দূরান্ত থেকে সেই বিস্ফোরণেস্থল দেখতে ভিড়ও করছেন লোকজন। এমন পরিবেশে খানিক হতাশা আর চাপা ক্ষোভ জমছে মোচপোলের পশ্চিমপাড়ায়।

Advertisement

মোচপোলের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এ দিন শোনা গেল সেই ক্ষোভের কথা। বাসিন্দারা জানালেন, শাসক দলের উঁচু থেকে নীচু— সব স্তরের নেতারারবিবার বিস্ফোরণের দিনে কর্তব্য দেখাতে দর্শন দিয়ে গিয়েছেন। বিস্ফোরণস্থলের পাশেই বাড়ি সফিকুল আলির। তাঁর বাবা সাইদুল আলি বিস্ফোরণে জখম। তিনি সদ্য আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। বিস্ফোরণেক্ষতিগ্রস্ত সফিকুলদের বাড়ির মতো অন্য বাসিন্দারা প্রায় সবাই পশ্চিমপাড়ার বাইরে। কারণ বাড়িগুলি বসবাস করার আর অবস্থায় নেই। সফিকুলের কাকা সামসুলের জমির উপরে থাকা ওই বাজিকারখানায় গত রবিবার বিস্ফোরণ হয়েছিল।

ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া বাড়ির বাইরে বসে সফিকুল বলেন, ‘‘সামসুল আমার কাকা হতে পারেন। কিন্তুকোনও সম্পর্ক ছিল না। বাজির ব্যবসা ঘিরেই আমাদের মধ্যে গোলমাল। বাবা এখন একটু ভাল আছেন। কত কষ্ট করে বাড়িটা তৈরি করেছিলেনবাবা। এখন যা অবস্থা, এটা ভাঙতেও দুই-তিন লক্ষ টাকা লাগবে। তার পরে তো নতুন করে বাড়ি তৈরির কথা ভাবব। কোথায় পাব এত টাকা? শাসক, বিরোধী পাশে কেউ নেই। কোনও দলেরই নেতাদের দেখা নেই। ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতিও কেউ দেননি।’’

বিস্ফোরণের পরে বাজি কারখানার ছাদ উড়ে এসে পড়েছিল মফিজুদ্দিন আলির চার মাসআগে তৈরি বাড়িতে। দোকান করবেন বলে লোহার শাটার দেওয়া দোকানঘরও তৈরি করিয়েছিলেন মফিজুদ্দিন। বিস্ফোরণের অভিঘাতে বাড়ি টিকে গেলেও সেটি ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছে পোষা গরুটিও। মফিজুদ্দিনেরআফশোস, ‘‘কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এই ভাঙা বাড়িতেই দিন কাটছে। ভয় হয়, ফাটল ধরে যাওয়া ছাদ ভেঙে না পড়ে। তিন ভাই মিলে বাড়িটা তৈরি করেছিলাম। এর সারাইয়ের খরচও প্রচুর। কোনও ক্ষতিপূরণের কথা কেউ বলছেন না। আমরা তো পরিস্থিতির শিকার। দোষ করল এক জন, খেসারত দিচ্ছি আমরা।’’

এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমপাড়া হাতছাড়া হয়েছে শাসকদল তৃণমূলের। সেখানে জিতেছে আইএসএফ। গ্রামে এমনও হাওয়া উঠেছে যে পঞ্চায়েতেজিততে না পারায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ নিয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছে শাসকদল।

যদিও এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মধ্যমগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক তথাখাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। বরং তাঁর দাবি, বিরোধীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কারও পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সেখানকার মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপানোর চেষ্টা করেছে। রথীনের কথায়, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। আপাতত পুলিশ সেখান থেকে লুকোনো বাজি উদ্ধার করছে, যাতে আর কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। শুনেছি, গ্রামের অনেকেই ওই বাজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাই সত্যি কারা ক্ষতিগ্রস্ত, ক্ষতিপূরণের আগে তা দেখা হবে। না হলে পরে অভিযোগ উঠবে, সরকার সব জানত বলেই ঢালাও ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আমি তো ওখান থেকেই নির্বাচিত। ওঁদের কথা তো অবশ্যই ভাবব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন